ডেস্ক নিউজ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে সরকার গঠিত তহবিলে সাড়া দিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগীরা। এ পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার সহায়তা পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। যার মধ্যে বেশির ভাগ ঋণ সহায়তাই উন্নয়ন সহযোগীরা অনুমোদন করেছে। এবার ফ্রান্স ভ্যাকসিন কিনতে দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার গত বছরের নভেম্বরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছে চিঠি দেয়। পাশাপাশি একটি তহবিলও গঠন করা হয়। করোনা তহবিলে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক—এডিবি, জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা), ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) মতো সংস্থাগুলো সাড়া দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও বাংলাদেশকে ঋণ দিতে চায়। এবার ফ্রান্সের সংস্থা এজেন্সি ফ্র্যাঞ্চাইজ ডি ডেভেলপমেন্ট (এএফডি) বাংলাদেশকে দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে।
সম্প্রতি দেওয়া এ চিঠিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িতব্য ‘ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড হেলথ সেক্টর বাজেট সাপোর্ট’ শীর্ষক প্রকল্পে এএফডি ২০০ মিলিয়ন ইউরো দিতে আগ্রহী। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দুই হাজার ২২ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। চিঠিতে বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ ২০ বছর সময় পাবে। এর মধ্যে সাত বছর থাকবে গ্রেস পিরিয়ড। অর্থাৎ এ সাত বছর কোনো সুদ পরিশোধ করতে হবে না। এর সুদহার হবে নমনীয়। তবে ঋণ পেতে চাইলে বেশ কিছু শর্ত মানতে হবে সরকারকে। এসব শর্ত নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় এএফডির সঙ্গে আলোচনা করছে। আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছলেই ঋণ সহায়তা নেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় টিকা কিনতে বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত ২৯ হাজার কোটি টাকা দিতে চায় উন্নয়ন সহযোগীরা। যেভাবে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে তাতে মন্ত্রণালয় মনে করছে, চলতি বছর সব মিলিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। এরই মধ্যে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) ২৫০ মিলিয়ন ইউরো সমপরিমাণ অর্থ ঋণ দেবে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দুই হাজার ৪৯৭ কোটি এক লাখ ৭৯ হাজার ৫৮০ টাকা।
এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) জানিয়েছে, ‘কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপারেন্ডেন্স’ প্রকল্পের আওতায় সংস্থাটি সব মিলিয়ে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ছয় হাজার ৩৬০ কোটি ৫৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার দেবে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ চার হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ‘কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপারেন্ডেন্স’ প্রকল্পের আওতায় সংস্থাটি এ টাকা ঋণ দেবে।
এডিবি করোনাপ্রতিরোধী ভ্যাকসিন কিনতে ৯৪ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ সাত হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। এসব উন্নয়ন সহযোগী ছাড়াও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সংস্থা (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৮২ কোটি ডলার ঋণ দিতে চায়। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। এগুলোর সঙ্গে ফ্রান্সের উন্নয়ন সহযোগীর অর্থ যোগ করলে মোট অর্থের পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি টাকা হবে।