নিউজ ডেস্ক:
সরকারের যে কর্মকাণ্ডের উপর সব মহলের মোটামুটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকে তা হলো জাতীয় বাজেট। নতুন কী থাকছে, কিসের দাম বাড়ছে, কিসের দাম কমছে সেদিকে থাকে সাধারণ মানুষের মূল আগ্রহ। বাজেট অংকের হিসাবে যতোটা না মনোযোগ পায় তার চেয়ে বেশি মনোযোগ থাকে বাজার দরের ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এক মোক্ষম সময় প্রতিপক্ষকে আক্রমণের। সরকারি দল বলে উন্নয়নের বাজেট, বিরোধী দল বলে গরিব মারার বাজেট। তা সে যেমনই হোক না, আজ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে আগামী অর্থবছরের বাজেট। নতুন সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট।
এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ২০তম বাজেট এটি। ৩০ জুন এ বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে।
বাজেটের আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে গতকাল সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন করতে না পারলে পরিকল্পনামন্ত্রী তা উপস্থাপন করতে পারেন। কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলাকালীন মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের সংসদবিষয়ক কার্যাবলি সম্পাদনার দায়িত্ব বণ্টন অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রীর বিকল্প হিসেবে জাতীয় সংসদসংক্রান্ত দায়িত্ব পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান পালন করবেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত কর ১৪ হাজার ৫০০ কোটি, কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি এবং বৈদেশিক অনুদান ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা।
বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি হতে পারে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এ ঘাটতি চলতি অর্থবছরের বাজেটে ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে ২০ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকার। এছাড়া অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেয়া হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য থাকছে।
প্রতিবছরই বাড়ছে বাজেটের আকার। আকার বাড়লেও দেশে এখনো দেখা দেয়নি কোনো ভয়ানক সংকট। সাধ্যের মধ্যেই থাকছে দেশের দ্রব্যমূল্যের বাজার। উচ্চ-মধ্য-নিম্নবিত্তে থাকছে সমতা। দেশের মানুষের আয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পণ্য রফতানি করে দেশ আয় করছে হাজার হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা। মানুষ খেয়ে পড়ে জীবনযাপন করছে। দেশের অতি দরিদ্রদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে। পরিশেষে এক কথাতেই বলা যায় আওয়ামী লীগ সরকারের বাজেট কখনোই গরিব মারার বাজেট নয়। বরং বরাবরই তা উন্নয়নের বাজেট।