ডেস্ক নিউজ
ব্যাপকভাবে বেড়েছে দেশের পণ্য আমদানি ব্যয়। মূলত এ বৃদ্ধি ব্যয়ের দিক থেকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৩৪৩ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বেশি। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পরিমাণের দিক দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ১১ কোটি ৯০ লাখ টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ কম। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো বিশ^বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব দেশের বাজারেও পড়েছে।
জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ব্যাপক হারে এতে বেশি জটিলতা তৈরি
করেছে নিত্যপণ্যের করকাঠামো। বিলাসী পণ্যের আমদানি শুল্ক ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে, যা বাজেটের অন্তর্ভুক্ত হবে। কালো সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি করপোরেট কর কমানোর চিন্তাভাবনা। ছোট, ক্ষুদ্র, মাঝারি ব্যবসায়ীদের নানা রকম ছাড় দেওয়ার চিন্তা। তেল, গ্যাসে, বিদ্যুৎসহ সামগ্রিক জ্বালানি খাত ও কৃষি খাতের কর কাঠামোর পুনর্গঠন নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। করোনার কারণে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতেও এ খাত দুটিকে চাঙ্গা করতে শিল্প খাতের করকাঠামোও অনেকটা সহজ ও সহনশীল করার দাবি রয়েছে। আবার অর্থের চাহিদা মেটাতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বাড়াতে হবে। নতুন করে নতুনদাতা তৈরি করার কৌশল ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। যারা কর দিয়ে আসছেন তারাই দিচ্ছেন। ফলে তাদের ওপরও চাপ কমাতে চায় সরকার।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের কর কাঠামো কেমন হতে পারে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনবিআরের শীর্ষ কর্তাদের নানা ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন। একইভাবে অর্থবিভাগের কর্মকর্তা ও অর্থমন্ত্রীকেও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সব সময় বাজেটের শেষ কাজ হিসেবে কর কাঠামোর পুনর্গঠন বা পুনর্বিন্যাসকে বুঝনো হয়। কোন পণ্যের দাম বাড়বে কোনটার দাম কমবে। সরকারের রাজস্ব আদায় নীতিটা কি ধরনের হবে। দেশি কিংবা বিদেশি কোনো শিল্প অগ্রাধিকার পাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের জন্য কী সুযোগ থাকছে। এর সবকিছুই নির্ভর করে কর কাঠামোর ওপর। আর এবারের সময়টা একেবারেই ভিন্ন। একে তো করোনা মহামারী থেকে উত্তরণের পর সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে নতুন ধরনের চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব বাজারে বিরাট এক প্রভাব ফেলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির দাম চরম এক ঊর্ধ্বমুখিতা প্রবণতায় রয়েছে। যার ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বাংলাদেশেও সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, কয়েকটি খাতে ভ্যাট হার কমানো হচ্ছে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে জীবনযাত্রাকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। অন্যদিকে ফ্রিজ উৎপাদনে ও মোবাইল ফোনের ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট হার বাড়ানো হচ্ছে। এতে বাজারে পণ্য দুটির দাম বাড়তে পারে।
অবশ্য বাজেটে জনগণের স্বস্তির কথা চিন্তা করে কয়েকটি খাতে ভ্যাট হার কমানোর ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী। অবসরে যারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাইরে হোটেল-রেস্টুরেন্টে খেতে পছন্দ তাদের জন্য সুখবর নিয়ে আসছে বাজেট। এখন এসি রেস্টুরেন্টে খেতে ১০ শতাংশ এবং নন-এসি রেস্টুরেন্টে খেতে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। আগামী বাজেটে উভয় ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগে এসি রেস্টুরেন্টে ১০০ টাকা খেলে ১০ টাকা ভ্যাট দিতে হতো, বাজেট পাস হলে আগামী ১ জুলাই থেকে সেখানে ৫ টাকা ভ্যাট দিতে হবে। অবশ্য ৫ তারকা হোটেলে খেলে ১৫ শতাংশ হারেই ভ্যাট দিতে হবে। শুধু তাই নয়, বাজেটে নারীদের মন জয় করারও কৌশল রাখা হচ্ছে। জুয়েলারি শিল্পের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হচ্ছে।