নিউজ ডেস্কঃ
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সন্ত্রাসীরা। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এই হামলা করায় বিএনপি-জামায়াত সরকার।
বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ মদদে মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গিরা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে এই মামলার রায়ে বর্তমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত। আদালতের এই রায়ে তারেক রহমান ও বিএনপির সন্ত্রাসবাদী এবং সংঘাতময় চরিত্র জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। ২১ আগস্ট মামলায় তারেক রহমান ও বিএনপি সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরণের সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এই হামলায় বিএনপির সম্পৃক্ততায় খোদ বিব্রত হয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। তারেক রহমানের বিদ্বেষী মনোভাব এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ২১ আগস্টের ঘটনায় বিএনপি নেতারা বিব্রত এবং সংক্ষুব্ধ। কিন্তু দলীয় নেত্রীর সন্তান হওয়ায় তারা এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রচেষ্টার প্রতিবাদ করেননি কেউই।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা বিষয়ে জানতে চাইলে দলটি স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, এই সত্য অস্বীকার করছি না যে, ২১ আগস্টের ঘটনায় আমরা বিব্রত হইনি। আজো হচ্ছি। আগস্ট মাস আসলেই আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। কারণ, দেশবাসী আজো ১৭ আগস্ট ও ২১ আগস্ট হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী মনে করে। বিষয়টি আমাদের জন্য চরম অস্বস্তিকর। ২১ আগস্টের পরিকল্পনার বিষয়ে আমরা কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানতে পেরে ম্যাডাম জিয়াকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বিষয়টিকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এরপর সিনিয়র দুজন মন্ত্রীর মাধ্যমে তারেক রহমানকে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার কুফল সম্পর্কে বোঝানো হলেও তিনি রাজি হননি। উল্টো তাদের মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আসলে জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে মেশার কারণে তারেক রহমানের ভেতর জঙ্গি তৎপরতা ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পরিকল্পনা সওয়ার হয়। আমরা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি সব সময়। তাই বলে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে, লাশের পরিসংখ্যানে নয়। ২১ আগস্ট হামলার কারণে বিএনপির ইমেজ নষ্ট হয়েছে, গ্রহণযোগ্যতা কমেছে দ্বিগুণ হারে। যার প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে। কোনো হত্যাকাণ্ডই সুফল বয়ে আনে না। আজকে সেটাই প্রমাণ হচ্ছে। পাপের কারণে আজকে এই মামলার অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ছোট ছোট ভুলের কারণে যেকোনো রাজনৈতিক দলের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, সেটার প্রমাণ দলের আজকের অবস্থা।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যার পর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার করেনি তৎকালীন স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান। বরং জাতির পিতার খুনিদের পুরষ্কৃত করে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছিলেন জিয়া। জিয়ার বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে কিন্তু ঘাতকদের হাতেই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, জেনারেল মঞ্জুরসহ অন্যান্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হলে দেশে ১৭ আগস্ট ও ২১ আগস্টের মতো হামলার ঘটনা ঘটতো না। দেশকে বিচারহীনতার বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেলেছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। যার কারণে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটেছে। বিশেষ করে বলবো, ২১ আগস্টের দায় বিএনপি-জামায়াত সরকার ও নেপথ্যের কারিগররা কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।