ডেস্ক নিউজ
চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। মাঝে করোনায় কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিলেও এখন কাজে গতি এসেছে। এরমধ্যেই শেষ হয়েছে প্রকল্পের ৬১ শতাংশ কাজ। ২০২২ সালের মধ্যেই দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে নতুন এই রেলপথ। এর ফলে পর্যটন শহর কক্সবাজার এবং সেখানে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের পথ সুগম হবে। রেলপথ সৃষ্টিতে মাটি ভরাট শেষ করে এখন চলছে লাইন স্থাপনের কাজ। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম এই প্রকল্পের শ্রমিকরা প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা কাজ করছেন। ফলে দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেলপথের বাস্তবায়ন কাজ এখন দৃশ্যমান।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প। নানা জটিলতার কারণে কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও কক্সবাজারের চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, সদর ও উখিয়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম স্টেশন থাকবে। ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটারের কাজ দ্বিতীয় দফায় করা হবে। এক থেকে দেড় হাজার শ্রমিক রেলপথ নির্মাণ কাজ করলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজের গতি কিছুটা কমে গেছে। এতদিন চট্টগ্রাম দোহাজারী পথে ডেমু ট্রেনসহ দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম-দোহাজারী পথে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে।
প্রকল্প ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপন করতে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ বাস্তবায়নের জন্য সরকার উদ্যোগ নেয়। ২০১৭ সালে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩৯টি সেতুসহ রেলপথ নির্মাণের চুক্তি হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই লটের কার্যাদেশ পায়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের ঝিলংজা চৌধুরীপাড়ায় দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমঘুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সরকারের নিজস্ব এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে এডিবির ১৫০ কোটি ডলার। ওই সময়ই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত স্থির করে দেয়া হয়। প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাকের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল। তবে প্রথম দফায় এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত। কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ করা হবে। এর আগে অসম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি চট্টগ্রাম- ষোলশহর লাইন ১৯২৯ সালে, ষোলশহর-নাজিরহাট লাইন ১৯৩০ সালে, ষোলশহর এবং দোহাজারী লাইন ১৯৩১ সালের মধ্যে নির্মাণ করে। দোহাজারী থেকে ১০০ কিলোমিটারের নতুন রেললাইন ২০২২ সালেই শেষ করে তা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
রেলের বিশাল ভূ-সম্পত্তি বেদখল ॥ চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের দুই পাশে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে কোটি কোটি টাকার ভূমি। একটি মহল দীর্ঘদিন গোমদন্ডি রেলওয়ে স্টেশন, বেঙ্গুরা রেলওয়ে স্টেশন, ধলঘাট রেলওয়ে স্টেশন, খানমোহনা রেলওয়ে স্টেশন, পটিয়া রেলওয়ে স্টেশন, চক্রশালা রেলওয়ে স্টেশন, খরনা রেলওয়ে স্টেশন, কাঞ্চননগর রেলওয়ে স্টেশন, খানহাট রেলওয়ে স্টেশন, হাশিমপুর রেলওয়ে স্টেশন, দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এসব ভূমি দখল করে রেখেছে। মাঝেমধ্যে পটিয়াসহ দোহাজারী পর্যন্ত রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান চালালেও পরবর্তীতে দখলদাররা অবৈধভাবে পুনরায় দখল করে নেয়।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, দোহাজারী থেকে ১০০ কিলোমিটারের রেলপথ নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান। চলতি মাস পর্যন্ত ইতোমধ্যে ৬১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। করোনার কারণে বর্তমানে শ্রমিকের অভাবে কাজের গতি অনেকটা কমেছে।