ডেস্ক নিউজ
১৯৭১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সংকল্প প্রকাশ করে যে, স্বাধীন বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাত হতে মুক্ত না করা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান তা শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এদেশের তরুণ সমাজ অস্ত্রধারণ করেছিল। যে নেতার আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন সেই নেতার কাছেই অস্ত্র জমা দেবেন।
ছাত্র নেতৃবৃন্দ বলেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনসাধারণের নিরাপত্তা বিধানের ব্যাপারে মুজিব বাহিনী সরকারের সাথে সহযোগিতা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা বাংলাদেশ ছাত্র লীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি আ.স.ম. আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন। তারা দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
এছাড়া ঐতিহাসিক এই দিনে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ জন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী এক যুক্ত বিবৃতিতে ঢাকা নগরীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার পূর্ণ তথ্য উদঘাটনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবী জানান। তারা বলেন, যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে এই ব্যাপক হত্যাকাণ্ড এবং নৃশংস বর্বরতার সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে কোনমতেই জেনেভা কনভেনশনের ছত্রছায়ায় থাকতে দেয়া যেতে পারে না। যুক্ত বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন: কবি সুফিয়া কামাল, সৈয়দ আলী আহসান, জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, সমর দাস, এ.বি.এম. মুসা, কামাল লোহানী, ফয়েজ আহমদ প্রমুখ।
বুদ্ধিজীবীরা এসব নরপিশাচদের বিচার করার জন্য বিশ্বের প্রখ্যাত আইনবিদ ও মনীষীদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের আবেদন জানান। তারা বলেন, ইয়াহিয়া খানের বর্বর সামরিক জান্তা এবং জেড. এ. ভুট্টো ২৫ মার্চের কালরাতে বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য তারা এক জঘন্য পরিকল্পনার কাজে হাত দেয় যা ছিল সুপরিকল্পিত গণহত্যার ষড়যন্ত্র। ইসলামের নামে এবং আল-বদর, আল-শামস, রাজাকার, মুজাহিদ, জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পি.ডি.পি ও অন্যান্য গুণ্ডাপাণ্ডাদের সহযোগিতায় চালানো হয় সভ্যতার ইতিহাসের সব চাইতে জঘন্য ও লোমহর্ষক গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ। এদের কুকীর্তির বিস্তারিত বিবরণ বিশ্ববাসী এখনও সম্পূর্ণভাবে অবহিত হতে পারেনি এবং এ বিষয়ে সমস্ত তথ্য এখনও সংগৃহীতও হয়নি।
বিবিসি’র এক খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশে সামরিক বিপর্যয় এবং পশ্চিম পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত বরাবর যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে তদন্তের জন্য বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন।