ডেস্ক নিউজ
দৈনিক ১৫ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ প্রকল্প চালু হয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রাম ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদন সক্ষমতা ৩৫ কোটি লিটার থেকে ৫০ কোটি লিটারে উন্নীত হলো। আরও ছয় কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প আগামি সেপ্টেম্বরে চালু হচ্ছে। এ প্রকল্পটি চালু হলে ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা ৫৬ কোটি লিটারে দাঁড়াবে। বর্তমানে পানির মোট চাহিদা ৪০ কোটি লিটার।
ফলে আগামি ২০৩০ সাল পর্যন্ত নগরীতে পানির কোন সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম ওয়াসা উৎপাদিত ৫০ কোটি লিটারের মধ্যে ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করে ৪৬ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করা হচ্ছে। যা মোট উৎপাদনের ৯২ শতাংশ। এর ফলে নগরীর পরিবেশগত ভারসাম্যও সুরক্ষা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি আগামিকাল বুধবার শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
কর্ণফুলী নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে এ প্রকল্পে পরিশোধনের পর তা সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রকল্পের মূল শোধনাগার জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। সেখানে পরিশোধনের পর পাইপলাইনে নগরীর নাসিরাবাদ ও হালিশহরে দুটি রিজার্ভারে পানি সংরক্ষণ করা হবে। সেখান থেকে সরবরাহ দেয়া হবে নগরীতে। বাংলাদেশ সরকার, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সী-জাইকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার অর্থায়নে চার হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৩ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের মূল কাজ শেষ হলেও পুরো কাজ শেষ হবে আগামি বছরের জানুয়ারিতে।
প্রায় পৌনে এক কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীও। ১৯৬৩ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। নগরীতে দীর্ঘদিন সুপেয় পানির তীব্র সংকট ছিল। বিগত দিনে বড় ধরনের কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় লেগে থাকতো পানির হাহাকার। ২০০৮ সালে দৈনিক ৩৭ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে চট্টগ্রাম ওয়াসা মাত্র ১৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহে সক্ষম ছিল। দৈনিক পানির ঘাটতি ছিল ২৪ কোটি লিটার।
বিএনপির আমলে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে শুরু হয় পানি সমস্যা নিরসনে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন। বিগত এক দশকে চট্টগ্রাম ওয়াসা শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১, শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সর্বশেষ বড় প্রকল্প শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ (কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-২) চালুর ফলে ওয়াসার সক্ষমতা দিনে ৫০ কোটি লিটারে উন্নীত হলো।
এ প্রকল্পের অধীনে দৈনিক ১৫ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন ইনটেক নির্মাণ করা হয়েছে। দৈনিক ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগারও নির্মাণ শেষ। দুই কোটি ৪৮ লাখ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংক এবং ৩০ লাখ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আরও একটি সুউচ্চ ট্যাংক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। তিন দশকি ৬৯ কিলোমিটার কনভেয়েন্স পাইপলাইন স্থাপন, ৩১ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপন, দুইটি ¯øাজ ট্যাংক নির্মাণ, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন, ৫৯টি ডিএম নির্মাণ, ৭শ কিলোমিটার সরবরাহ পাইপলাইনের কাজও শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নগরীর নাসিরাবাদ ও হালিশহরে সুউচ্চ রিজার্ভার নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীর কেন্দ্রীয় উত্তর ও পশ্চিমাংশের পানির চাপ সুষম করা সম্ভব হবে। এখন আর নগরীর পাহাড়ি এবং অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকাগুলোতে পানির সংকট থাকবে না। ৭শ কিলোমিটার সরবরাহ পাইপলাইন স্থাপনের ফলে পাইপলাইনে লিকেজের পরিমাণ কমে যাবে। আর তাতে ওয়াসার সিস্টেম লসও কমে আসবে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর চাহিদা মিটিয়ে কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে গড়ে ওঠা কোরিয়ান ইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএল, চায়নিজ ইকোনমিক জোনসহ ওইসব এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ দিতে ভাÐালজুড়ি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, সেপ্টেম্বর নাগাদ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কর্ণফুলীর পশ্চিম তীরের শিল্পাঞ্চল এবং সেইসাথে পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালী এলাকার জনগণকে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আওতায় আনা যাবে। আর তাতে ওইসব এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এক ফজলুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ চালুর ফলে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহ ক্ষমতা দৈনিক ৫০ কোটি লিটারে উন্নীত হয়েছে। তবে চট্টগ্রামে পানির চাহিদা আরও অনেক কম। ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প সেপ্টেম্বরে চালু হলে উৎপাদন সক্ষমতা ৫৬ কোটি লিটারে দাঁড়াবে। এর ফলে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত এ মহানগরীতে পানির কোন সংকট থাকবে না।