ডেস্ক নিউজ
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে বিদ্যমান ১৫শ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের পুরোটাই এখন থেকে নারী উদ্যোক্তারা পাবেন। মাত্র পাঁচ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দেবে। এতদিন সাত শতাংশ সুদে সব ধরনের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য যা উন্মুক্ত ছিল। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়।
সংশ্নিষ্টরা জানান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে নারীর সম্পৃক্ততা বাড়াতে সহজে ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট এসএমই ঋণের অন্তত ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। তবে দীর্ঘ দিন ধরে এসএমই ঋণে নারীর অংশ চার শতাংশের মধ্যে সীমিত রয়েছে। এরকম প্রেক্ষাপটে পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে এসএমই ঋণে নারীর অংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার কমানো হয়েছে। এছাড়া ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমেও তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এজন্য অন্তত ১০ শতাংশ নারীকে গ্যারান্টির শর্ত দেওয়া হবে। এতে করে পুনঃঅর্থায়ন নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণে ব্যাংকগুলোর উৎসাহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান ‘স্মল এন্টারপ্রাইজ খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ থেকে এখন থেকে শুধু নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে হবে। এ তহবিল থেতে তিন শতাংশের পরিবর্তে ব্যাংকগুলো এখন থেকে মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে। গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করতে হবে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ সুদে। এতদিন যা সাত শতাংশ ছিল। ২০২৪ সালের মধ্যে কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প খাতে নিট ঋণের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা পর্যায়ে বিতরণের লক্ষ্যে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা শিখা সমকালকে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া সহজ করবে। নারীদের এ ধরনের উদ্যোগে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে আগামীতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান থাকবে।
করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর গত বছরের মে মাসে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এ পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আকার বাড়িয়ে ১৫শ কোটি টাকা করা হয়। আগে যা ৮৫০ কোটি টাকা ছিল। একইসঙ্গে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার ৯ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর পুনঃঅর্থায়নের সুদহার পাঁচ শতাংশ থেকে নামানো হয় তিন শতাংশে। নারীর জন্য অগ্রাধিকার থাকলেও এতদিন এ তহবিল থেকে নারী ও পুরুষ উভয় শ্রেণির উদ্যোক্তাই ঋণ নিতে পারতেন।
জানা গেছে, বেশ আগে গঠিত ঘূর্ণায়মান এ তহবিল থেকে মোট চার হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এর মধ্যে নারীদের মাঝে বিতরণ করেছে তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বাকি এক হাজার ৯৯ কোটি টাকা পেয়েছেন পুরুষ উদ্যোক্তারা। গত মে মাসে এ তহবিল থেকে অর্থ পাওয়ার শর্ত শিথিল করে তিন বছর ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকলেই তাকে ঋণ পাওয়ার যোগ্য বিবেচনার সুযোগ দেওয়া হয়। আগে যা ৫ বছর ছিল। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি এবং মূলধন ঘাটতি থাকলেও তারা ঋণ বিতরণ করতে পারবে বলে জানানো হয়।