ডেস্ক নিউজ
মহামারির মধ্যেও পণ্য রফতানিতে রেকর্ড অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। সেপ্টেম্বরের রেকর্ড ভেঙে অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ পণ্য রফতানির নতুন রেকর্ড হয়েছে। অক্টোবরে ৪৭২ কোটি ডলার বা ৪০ হাজার ৫১৫ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছেন দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। অতীতে আর কোনো মাসেই এ পরিমাণ পণ্য রফতানি হয়নি।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে ৪১৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়। গত বছরের জুলাইয়ে তখনকার সর্বোচ্চ ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রফতানি আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১ হাজার ৫৭৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
ইপিবির পরিসংখ্যান বলছে, দেশ থেকে তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার পণ্য রফতানি বেড়েছে। এছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্য রফতানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণে সার্বিকভাবে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চার মাসে তৈরি পোশাকপণ্য রফতানি থেকে আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।
অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে ১ হাজার ২৬২ কোটি ১১ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার পণ্য রফতানি করেছে ৭২১ কোটি ডলার, এ খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ শতাংশ। আর ওভেন পণ্য রফতানি হয়েছে ৫৪১ কোটি ১০ লাখ ডলারের, এই খাতে প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিশ্বব্যাপী পোশাকের চাহিদা এবং খুচরা বিক্রেতা বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে নতুন অর্ডার আসছে, রফতানি বাড়ছে।
তরুণ উদ্যোক্তা ‘ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড’ এর পরিচালক রুবেল বলেন, আমরা রফতানি বেশি করছি, তবে আমাদের উৎপাদন খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যার ফলে আমাদের মার্জিন কম হয়েছে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পের দুর্বলতা পালাক্রমে বেড়েছে। তাছাড়া রফতানির এ ঊর্ধ্বগতি কতদিন টিকে থাকে তাও দেখতে হবে। তাই, আত্মতুষ্ট না হয়ে আমাদের শিল্পের গুণগত সক্ষমতা তৈরিতে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে এবং আরও বেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে। যাতে আমরা মান এবং পণ্যের মূল্য বাড়াতে পারি।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর শেষে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে ৪৬ কোটি ৪১ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিক পণ্য রফতানির আয় বেড়েছে ২৯ শতাংশ। চার মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়েও প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় চামড়া খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।
তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে। অক্টোবর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।