বিদ্যুৎ এর দাবিতে জনতার করা মিছিলে শাসকদের গুলি, নিহত ১৭। অসহনীয় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় সাংসদকে ধাওয়া, সাংসদের দৌঁড়। শিরোনামগুলো পড়ে নতুন প্রজন্মের অনেকেরই হতবাক হবার কথা। কল্পনাপ্রসূত শিরোনাম নয় এগুলো, প্রায় এক যুগের কিছু বেশি সময় আগে পত্রিকার পাতায় প্রায় প্রতিদিনই অবাক করে দেয়ার মতো এমন শিরোনাম আসতো।
বিদ্যুৎ খাতে তখন চলতো সীমাহীন লুটপাট,অনিয়ম। ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠী ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার নিয়মিত বৃদ্ধি পাবার কথা, সেখানে উল্লেখ্য সময়ে উল্টো কমেছে। তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীপুত্র তারেক রহমানের প্রতিষ্ঠানের বদৌলতে জনগণ পেতো কেবল খাম্বা। জনসাধারণ বিদ্যুৎ নিয়ে নির্মম পরিহাস দেখে রসিকতা করে বলতো, ‘বিদ্যুৎ আসলে মাঝে মাঝে যায় না, বরং মাঝে মাঝে আসে’।
আশার কথা হচ্ছে, সেই অন্ধকার যুগ পেরিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। জনপ্রত্যাশার কথা বিবেচনায় এনে শুরু থেকেই সরকার বিদ্যুৎ খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়। এর ফলও আসতে থাকে হাতেনাতে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময়ে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৯৪২ মেগাওয়াট এবং প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩২৬৮ মেগাওয়াট। সে সময় নতুন সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানপূর্বক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এ খাতের সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নিউক্লিয়ার এনার্জিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে ১১৮টিতে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের নেয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিও সন্তোষজনক। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষ। চলতি বছরেই এটি উৎপাদনে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। চীন-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগে বরগুনা জেলায় নির্মাণাধীন ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও এগোচ্ছে দ্রুতগতিতে। এটিও ২০২২ সাল নাগাদ উৎপাদনে যেতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও মাতারবাড়ি ১২০০ ওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতিও সন্তোষজনক।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে শতভাগ বিদ্যুৎ এর আওতায় নিয়ে আসতে সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট সকলে এই লক্ষ্য নিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রুত তারা ‘শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার’ অনন্য এক বাংলাদেশ উপহার দেবেন, এমনটাই প্রত্যাশা আপামর জনসাধারণের।