ডেস্ক নিউজ
সরকারিকরণে নির্বাচিত কলেজগুলোতে ২০১৬ সালের ৩০ জুন নিয়োগ ও অর্থ ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল কলেজের স্হাবর ও অস্হাবর সম্পত্তি সরকারকে ডিড অব গিফট দলিল করে দেওয়া হয়। আর ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট জাতীয়করণের সরকারি আদেশ জারি হয়।
মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩০২টি কলেজের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ১৪৫টি কলেজের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি কলেজে ফাইল যাচাই শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই ৫৫টি কলেজের মধ্যে ৪০টি কলেজের ফাইল পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। আর ২০টি কলেজের ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী, ২০টি কলেজের ফাইল এখন সচিব কমিটিতে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিটি কলেজের ফাইলেই রয়েছে দুই-এক জন শিক্ষকের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তি। ফলে আপত্তি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব কলেজের শিক্ষকদের আত্তীকরণের বিষয়ে অনুমোদনের জন্য সচিব কমিটিতে পাঠানো যাচ্ছে না। সচিব কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী, অনুমোদনের জন্য একটি কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারী-কর্মকর্তার তথ্য একসঙ্গে পাঠাতে হবে। পৃথক পাঠানো যাবে না। এ কারণেই বিলম্ব হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এক জন বা দুই জন শিক্ষকের কারণে কলেজের সব শিক্ষকের সরকারিকরণ আটকে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ধীরগতি ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় এসব কাজ শেষ হতে হয়তো আরো কয়েক হাজার শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত অবসর গ্রহণ করেন ৩৩৮ জন। আর জুলাই ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অবসরে যান ১৬৯ জন। ২০২০ সালে অবসরে যান ৪৩৫ জন। তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে অবসরে যাবেন ৪৫০ জন। ২০২২ সালে ৪৫৮ জন, ২০২৩ সালে ৪৪৮ জন, ২০২৪ সালে ৪৫৬ জন এবং ২০২৫ সালে অবসরে যাবেন ৫২৫ জন। চাকরিবিধি অনুযায়ী বয়স ৫৯ বছর হওয়ায় এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন।
প্রতিদিন এই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। রেজা সিদ্দিকী ৩২ বছর শিক্ষকতা করেছেন সাভার কলেজে। ২০১৮ সালে কলেজটি সরকারি হলেও তিনি অবসরে যান গত বছরের জানুয়ারিতে। ফলে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা না নিয়েই তিনি বাড়ি ফেরেন। তিনি এই প্রতিবেদকে জানান, সরকারি সুবিধা তো পেলাম না। বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে যে অর্থ পাব তার খোঁজখবর নিয়ে এসেছি। রেজা সিদ্দিকীর মতো দেড় হাজারের মতো শিক্ষক এভাবে সরকারি সুবিধা না নিয়েই অবসরে যাচ্ছেন। যাওয়ার অপেক্ষায় আছে আরো সহস্রাধিক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু শিক্ষকদের আত্তীকরণের বিলম্বের জন্য শিক্ষকদের তেমন দায় নেই। এ কারণে দেরি হওয়ার ফলে শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেন? এমন ভাবনায় নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়। ৩০২টি কলেজ জাতীয়করণের সরকারি আদেশ হয় ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট। কোনো শিক্ষক যদি এই আদেশ জারির পর অবসের যান, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনিও সরকারি সুবিধা পাবেন। বয়স ৫৯ পেরুলেও তাকে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট তারিখেই নিয়োগ দেওয়া হবে এবং ঐ দিনই যোগদান দেখানো হবে। এতে ঐ শিক্ষক একজন সরকারি শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর যেসব সুযোগ-সুবিধা পান, নিয়ম অনুযায়ী ঐ শিক্ষকও সে সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
তথ্য অনুযায়ী, যেসব কলেজের ফাইল ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত এসেছে, যেখানে অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের তথ্য নেই। তাদের বিষয় নতুন করে রেজুলেশন পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের পদ অনুমোদন করা হবে। আর এখন থেকেই জিও জারির পর অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের তথ্য যুক্ত করেই সব প্রক্রিয়া অনুমোদন হবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মু ফজলুর রহমান বলেন, কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যাতে দ্রুত কাজ শেষ করা যায়।
সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে আগামী সাত-আট বছরেও শিক্ষক-কর্মচারীরা আত্তীকরণ হবেন বলে আমার মনে হচ্ছে না। এ কারণে আমরা হতাশ, ক্ষুব্ধ। বিধিমালার আলোকেই অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান এই শিক্ষক নেতা।