ডেস্ক নিউজ
শতাব্দীর মহানায়ক আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান পুণ্যভ‚মি গোপালগঞ্জ। ভৌগোলিক কারণে এ জেলার অধিকাংশই নিম্নঞ্চল। স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রে এটি ছিল বিল-বাঁওড় খাল ও নদী-নালায় ভরা একটি পশ্চাৎপদ এলাকা। অধিকাংশ মানুষ ছিল দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের। আর তাই, দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেশ-গঠনের পাশাপাশি গোপালগঞ্জের উন্নয়নেও মনোনিবেশ করেছিলেন। কিন্তু ১৫ আগস্টের কালরাতের পর থেমে যায় এখানকার সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। অবহেলার দরজায় আটকা পড়ে গোপালগঞ্জ। এরপর যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, কেউই আর ভাবেনি গোপালগঞ্জ নিয়ে। আর্থ-সামাজিক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে একেবারেই পিছিয়ে পড়ে গোপালগঞ্জ। পরিণত হয় বিচ্ছিন্ন জনপদে। শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর গর্বে গর্বিত এ গোপালগঞ্জের মানুষ ক্রমেই হতে থাকে অবহেলিত ও বঞ্চিত। এভাবে পেরিয়ে যায় ২০টি বছর।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে নজর দেন গোপালগঞ্জের শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত সকল উন্নয়নের দিকে। উন্নয়ন হয় মহাসড়ক, সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, গ্রামীণ সড়ক, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নতুন-নতুন ভবন, হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক ও বিদ্যুত ব্যবস্থায়। টুঙ্গিপাড়ায় নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু সমাধিসোৗধ কমপ্লেক্স, পর্যটন মোটেল, শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, শেখ কামাল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং কোটালীপাড়ায় নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। গোপালগঞ্জ শহরেও ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। অবহেলিত গোপালগঞ্জসহ আশপাশ এলাকায় প্রকৌশল শিক্ষার প্রসারে গোপালগঞ্জ শহর-সংলগ্ন ঘোনাপাড়া এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় গোপালগঞ্জে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই গোপালগঞ্জের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়। তৎকালীন সরকার গোপালগঞ্জের বিভিন্ন প্রকল্পের ১ হাজার কোটি টাকা ফেরত নিয়ে যায়। বিমাতাসুলভ আচরণ আর অবহেলার দরজায় আবারও আটকা পড়ে গোপালগঞ্জ।
ওয়ান-ইলেভেন কাটিয়ে ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দেশজুড়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেইসঙ্গে গোপালগঞ্জেও শুরু হয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। গোপালগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনের একটিতে (গোপালগঞ্জ-৩) রয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ আসন থেকে তিনি ৭ বার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। গোপালগঞ্জ-২ আসনে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম-সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম; তিনি এ আসন থেকে ৮ বার নির্বাচিত হয়েছেন এবং গোপালগঞ্জ-১ আসনে রয়েছেন দলের আরেক প্রেসিডিয়াম-সদস্য লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান; তিনি এ আসন থেকে ৫ বার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই তাদের কল্যাণে ও ঐকান্তিক সহযোগিতায় গোপালগঞ্জকে আর পিছু তাকাতে হয়নি। দীর্ঘদিনের অবহেলার দরজা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে গোপালগঞ্জ।
বিগত এক যুগ ধরে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে এসেছে গোপালগঞ্জ। জেলার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষিতের হার বেড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হারও কমেছে। ২০১২ সালে চালু হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়। এখন সেখানে ৩৪টি বিভাগে দেশের প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। ইতোমধ্যে বহু শিক্ষার্থী সেখান থেকে পড়াশুনা শেষ করে বেরিয়ে গেছে। চালু হয়েছে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, শেখ সেলিম ল’ কলেজ, কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, পিটিআই, বিআরটিসি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ্ টেকনোলজি, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট ও মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। কোটালীপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড)। সম্প্রতি শেষ হয়েছে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নির্মাণ কাজ। চলছে ৫০-আসনবিশিষ্ট শেখ লুৎফর রহমান ডেন্টাল কলেজের নির্মাণ কাজ। এছাড়াও সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজের ১০তলা কমার্স-ভবন এবং ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস, ১৮টি বেসরকারী কলেজে ৪-তলা ভবন, ২টি টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ৩০টি হাইস্কুল, ১৮টি ৪-তলা মাদ্রাসা-ভবন ও শেখ রাসেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের নির্মাণ কাজ চলছে। প্রতিটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে চলছে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড।
স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় গোপালগঞ্জ সদরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। সিটি-স্ক্যানারসহ হাসপাতালের চিকিৎসা-সরঞ্জামাদির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বাকি চার উপজেলায় ৪টি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল হয়েছে। সম্প্রতি কাশিয়ানীর ব্যাসপুরে ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেবাদান চলছে জেলার ১৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে। গোপালগঞ্জ শহর-সংলগ্ন ঘোনাপাড়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম চক্ষু হাসপাতাল ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান’। একই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারী ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের তৃতীয় প্ল্যান্ট; যেখানে গোপালগঞ্জের প্রায় ১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকায় নির্মিত হয়েছে ২০ শয্যাবিশিষ্ট ট্রমা সেন্টার।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে গোপালগঞ্জে স্থাপিত হয়েছে রেল-যোগাযোগ। এখান থেকে রাজশাহী ট্রেন চলাচল করছে নিয়মিত। জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রশস্ত হয়েছে পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর সঙ্গে সংযোগ সড়কও। টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী এলাকায় মধুমতী নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে শেখ লুৎফর রহমান সেতু। এতে গোপালগঞ্জের সঙ্গে পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলার যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নির্মিত হয়েছে চাপাইল সেতু; যা গোপালগঞ্জের সঙ্গে খুলনা ও নড়াইল জেলাকে সংযোগ করেছে। হয়েছে গৌরনদী-আগৈলঝড়া-পয়সারহাট-কোটালীপাড়া-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক; যা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ করেছে। নির্মিত হয়েছে গেরাখোলা সেতু, সাতপাড় সেতু, জলিরপাড় সেতু। চলছে কালনা সেতু নির্মাণ কাজ; যেটি হবে বাংলাদেশের প্রথম ৬ লেনের সেতু। চলছে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-মোল্লাহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্ততা উন্নয়নের কাজ। এছাড়াও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন জেলা মহাসড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীতে খনন করে বরিশাল-খুলনা নৌ-রুটের নাব্য ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মধুমতি নদী ও বর্ণির বাঁওড়সহ জেলার বিভিন্ন জলাধারের তীরে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-বিজড়িত পাঁচুড়িয়া-টুঙ্গীপাড়া ১৭ কিমি নৌরুট খনন করে চালু করা হয়েছে এবং টুঙ্গীপাড়ার পাটগাতী লঞ্চঘাট এলাকায় মধুমতি নদী তীরে নির্মিত হয়েছে ল্যান্ডিং স্টেশন ও স্টিমার-ঘাট।
ইতোমধ্যে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে গোপালগঞ্জ জেলা। ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার-প্ল্যান্ট চালু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। স্থাপন করা হয়েছে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। নির্মিত হয়েছে জেলা সার্ভার স্টেশন, ফায়ার-সার্ভিস স্টেশন, এনএসআই ভবন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, ১২-তলাবিশিষ্ট চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন। সদর ও কোটালীপাড়া থানায় নির্মিত হয়েছে ৪ তলাবিশিষ্ট থানা-ভবন। বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্মিত হয়েছে ভ‚মি অফিস ভবন। জেলা হেডকোয়ার্টারে শেষ হয়েছে আনসার-ভিডিপি ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টার্স কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ।
এ জেলায় শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় অন্তত ১৩ হাজার ২শ’ ৮২টি পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে। ৪টি রুরাল পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম, ৭টি আরও প্লান্ট ও ৪ হাজার উন্নত ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। সুপেয় পানির সরবরাহ করতে গোপালগঞ্জ, টুঙ্গীপাড়া ও কোটালীপাড়া পৌরসভায় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বসানো হয়েছে। সারা জেলায় পর্যাপ্ত গভীর নলক‚প বসানো হয়েছে। আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসনকল্পে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। জেলার পল্লী এলাকায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে আরও প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যও বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।
চালু হয়েছে ১০ কিলোওয়াট এফ এম বেতার কেন্দ্র। সেখান থেকে নিয়মিত প্রচাচিত হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক চর্চায় নির্মিত হয়েছে জেলা শিশু একাডেমি ভবন, শেখ ফজলুল হক মণি স্মৃতি অডিটোরিয়াম, কোটালীপাড়ায় উনশিয়া গ্রামে কবি সুকান্তের বাড়িতে মিলনায়তন এবং টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া মিলনায়তন। বিভিন্ন উপজেলায় চলছে মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের কাজ। চিত্ত-বিনোদনের জন্য গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে শেখ রাসেল শিশুপার্ক। সম্প্রতি শেষ হয়েছে টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাড সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ।
জেলার ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়নে মধুমতি লেকের পাড়ে নির্মিত হয়েছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল এ্যান্ড জিমনেসিয়াম এবং মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। শেখ ফজলুল হক মণি স্টেডিয়ামেও গ্যালারি সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে জেলার বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। কোটালীপাড়ায় হেমায়েত বাহিনী জাদুঘর নির্মিত হয়েছে। পাঁচ উপজেলাসহ জেলায় ৬টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের করে দেয়া হয়েছে বীর নিবাস।
জেলার কৃষি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে; উৎপাদনও বেড়েছে। কৃষি খাতের উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থাপন করা হয়েছে কৃষি গবেষণা, ধান গবেষণা ও পরমাণু কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে তারাইল পাঁচুড়িয়া বন্যা-নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প। সম্প্রতি গোপালগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী বৈরাগীর খালে পানি-প্রবাহ শুরু হয়েছে। এছাড়াও পশ্চিম গোপালগঞ্জ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পসহ জেলার ছোট ছোট বিভিন্ন নদী, খাল ও জলাশয়ের পুনঃখননের কাজ চলছে। সেচ প্রকল্প ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ কৃষি প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকায় গোপালগঞ্জে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকও সহজে ন্যায্যমূল্যে তার উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করতে পারছেন।
শিল্প-কারখানা স্থাপনে গোপালগঞ্জের হরিদাসপুরে সম্প্রসারিত বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়েছে। গোপালগঞ্জ পৌর-এলাকা বর্ধিত করা হয়েছে। ৯টি ওয়ার্ড থেকে ১৫টি ওয়ার্ডে উন্নীত করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মরা মধুমতির খাল লেকে রূপান্তর হয়েছে; যেটি শহরবাসীর চিত্ত-বিনোদনের বড় একটি ক্ষেত্র। মধুমতি লেকের উপরে ফেন্সি ও দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি লেকটির পুনঃখননসহ সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। পৌর-এলাকায় পাইপ ড্রেন ও আরসিসি ড্রেনসহ প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। শহরের পাঁচুড়িয়া এলাকায় নির্মিত হয়েছে ৫-তলাবিশিষ্ট আধুনিক ডাকবাংলো। এছাড়াও ৮-তলাবিশিষ্ট আধুনিক পৌর নিউমার্কেট, শেখ সেলিম মিলনায়তন, ৪-তলাবিশিষ্ট পৌর সুপার মার্কেট, আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সেন্টার, আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার ও মসজিদ নির্মাণসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে এলইডি লাইট স্থাপন করে শহরকে আলোকিত করা হয়েছে। চলছে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ও কাঁচাবাজারে বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণ কাজ। এছাড়াও কেন্দ্রীয় আন্তঃজেলা বাস-টার্মিনাল, আধুনিক শেখ রাসেল শিশু পার্ক, স্কোটার হাউস, নান্দনিক ব্রিজ ও আবাসন প্রকল্প সম্প্রসারণসহ নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে গোপালগঞ্জ পৌরসভার।
সে ধরনের কোন শিল্প-কারখানা না থাকলেও গোপালগঞ্জের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে সম্প্রতি ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। ক্ষুদ্র ও কুটির-শিল্প সম্প্রসারিত হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সরকার জমি অধিগ্রহণ করায় জেলার বহু পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। উন্নয়ন প্রভাবে এখানকার জমির মূল্যও কয়েকগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন খাতে সরকারের নানা সহায়তা কার্যক্রম ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান থাকায় জেলার অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে।
জনসেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘কুইক সার্ভিস ডেলিভারি পয়েন্ট’ স্থাপন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ও সার্কিট হাউসে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত করতে এবং শিশু-কিশোরদের আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মবিশ^াসী করে গড়ে তুলতে চলছে নানা কার্যক্রম। তাদের উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে থ্রিডি মুভি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য এবং ঘরে থাকা মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য নানা কার্যক্রম চলছে। যুব-প্রশিক্ষণ পেয়ে ছেলেমেয়েদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর মাধ্যমেও জেলায় ১৬ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন ট্রেডে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ পেয়ে গরিব ও দুস্থ মহিলারা জীবিকায়নের পথ খুঁজে পেয়েছে। জেলা প্রশাসন প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজ তদারকি করছে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ-সহায়তা কার্যক্রমসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
গোপালগঞ্জ শহরের একশ’ বছরের পুরনো নজরুল পাবলিক লাইব্রেরিটিকে আধুনিকায়ন করে নতুন আঙ্গিকে চালু করা হয়েছে। সদর উপজেলাধীন সুকতাইল ইউনিয়নের পাইকেরডাঙ্গা মৌজায় স্থাপন করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ নামে পর্যটন কেন্দ্র; যেখানে অন্তত ৫০ ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সরকারী সব সেবা পৌঁছে দিতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পৃথকভাবে পরিষদ-কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় সকল ভোটার স্মার্টকার্ড পেয়েছে। এরই মধ্যে গৃহহীন ও ভ‚মিহীন ১৪শ’ ৩টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছে; আরও ৬শ’ ১০টি ঘরের নির্মাণ-কাজ চলছে। এছাড়াও গৃহহীন আরও ১ হাজার পরিবারকে ঘর করে দিয়েছে সরকার। এসব ছাড়াও জনগণের কল্যাণে জেলায় সরকারের নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে; যার সুফল পাচ্ছেন গোটা গোপালগঞ্জবাসী। আরও অনেক নতুন নতুন কল্যাণকর ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘুমিয়ে আছেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এটি এখন বাঙালীর তীর্থস্থান। এ জেলার সদর থেকে কোন প্রান্তে যেতে এখন আর পায়ে হাঁটতে হয় না। সর্বত্র যানবাহন চলছে। শহরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবন-মানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থা পাল্টে গেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কল্যাণে গোপালগঞ্জ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। জাতির পিতার এ জেলা উন্নয়নের মহাসড়কে আরও এগিয়ে যাবে- এমন প্রত্যাশা সবার।