ডেস্ক নিউজ
বিশ্বে বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলার পাশাপাশি ইতিবাচক প্রচারণায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কলাম লেখক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এসব কলাম লেখককে যথাযথ সম্মানীও দেওয়া হবে। পাশাপাশি এ কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি নতুন শাখা খোলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের আওতায় নতুন এ শাখার নাম দেওয়া হয়েছে- ‘অভিবাসী কূটনীতি’। এই অধিশাখা খুলতে ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটির সদস্যদের ভালো কলামিস্টদের সন্ধান দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধ ও ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, কমিটির আগের বৈঠকে বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধে মন্ত্রণালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। এসব কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে একটি আলাদা সেল গঠনেরও কথা বলা হয় ওই সুপারিশে। আগের বৈঠকের সুপারিশের অগ্রগতি প্রতিবেদনে আজ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসী বা অভিবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মিডিয়ায় তাদের সরব উপস্থিতি ও দেশবিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য ও বক্তব্য প্রচারের জন্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে স্বাগতিক দেশের নানাবিধ আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগে ‘অভিবাসী কূটনীতি’ নামে একটি অধিশাখা সৃষ্টি করে একজন পরিচালকসহ দু’জন সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অধিশাখা সৃজনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগসহ অন্যান্য অংশীজনের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর কাজ চলছে।
এদিকে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আগের বৈঠকে বলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাকে পুঁজি করে সরকারবিরোধীরা দেশের ভেতরে ও বাইরে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা ব্যাপকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে এমন কোনো কলাম কারও কাছে থাকলে তা হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করলে বিভিন্ন মিশনে প্রচারের কথা বলেন তিনি।
ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, ইদানীং দেশের বাইরে বিভিন্ন ডায়াসফোর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা করে যাচ্ছে। এগুলো মোকাবিলায় মিশনগুলোর জোরালো ভূমিকা পালন করা উচিত।
ওই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আর্টিকেল লেখার দক্ষ জনবল না থাকায় সম্মানী দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কলামিস্টদের ইতিবাচক লেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু ভালো আর্টিকেল লেখার মতো কলামিস্টের সংখ্যাও খুব কম। আগামী দেড় বছর বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী শক্তিগুলো সোচ্চারভাবে সমালোচনায় মেতে উঠতে পারে। এ সময় মন্ত্রী ভালো কোনো কলামিস্টের সন্ধান থাকলে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে কমিটির সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি এড়িয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র
আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, প্রতিটি সফরের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসন (আগস্ট মাসে) বাংলাদেশ সফরে এলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে, আমেরিকায় পলাতক খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সব সময় আইনি প্রক্রিয়া বলে তারা এড়িয়ে যাচ্ছে।
এ বছরের শেষে ঢাকা নিউইয়র্ক ফ্লাইট
চলতি বছরের শেষ নাগাদ ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করা যাবে বলে সংসদীয় কমিটিকে অবহিত করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরে বিশেষ করে নিউইয়র্ক থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে পরিদর্শনে আসা ব্যক্তিদের তেমন কোনো চেক না করে ছেড়ে দেওয়ায় তারা ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিষয়ে বিরূপ প্রতিবেদন দিয়েছে। অপর দিকে প্রবাসী বাঙালি শ্রমিকরা দেশে এলে বিমানবন্দরে তাঁদের হয়রানি করা হয় বলেও অভিযোগ আছে। যে কারণে ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
বিনিয়োগকারীরা হয়রানির শিকার
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এলে বিদেশিরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হন বলে কমিটির আগের বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে। এ কারণে তাঁরা বিনিয়োগ না করে ফিরে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করা হয়। ওই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেক কষ্ট করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আনা হলেও তাঁরা বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়ে ফিরে যাচ্ছেন এবং অন্যদেরও বাংলাদেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছেন। এছাড়া অনেক প্রবাসী বাঙালি দেশে বিনিয়োগ করতে চাইলেও তাঁদের জমি দখল, বাড়ি দখল থেকে শুরু করে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ফলে তাঁরাও দেশে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন না।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর বিশ্বে ১৬৮তম অবস্থানে আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে না পারলে দেশে কোনো বিনিয়োগ হবে না বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, দেশে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। বিনিয়োগ করতে গেলে বিভিন্ন সেক্টরে ধরনা দিতে হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারী অধিকাংশই এখানে বিনিয়োগ না করে বাধ্য হয়ে তাঁদের দেশে ফিরে যাচ্ছেন।
কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, দেশে প্রচুর বিনিয়োগের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিনিয়োগের লক্ষ্যে সরকার ও ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে।
কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মঙ্গলবারের বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, আব্দুল মজিদ খান, হাবিবে মিল্লাত, নাহিম রাজ্জাক ও কাজী নাবিল আহমেদ অংশ নেন।