ডেস্ক নিউজ
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের একটি বক্তব্য ফেসবুক/ইউটিউবে ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী “বাংলাদেশ ভারতের অংশ” এই কথাটি বলেছেন। এই সংক্রান্ত একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরে পড়ছে অনেকেরই। তবে সচেতন নাগরিক মাত্রই বোঝার কথা যে, মাত্র ২০ সেকেন্ডের একটি বক্তব্য মূলত একটি পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যের অংশমাত্র। এবং সেখানেও “বাংলাদেশ ভারতের অংশ”, এমনটা দাবি করা হয়নি- বরং বলা হয়েছে বাংলাদেশ একসময় ভারতের অংশ ছিল।
গত ১১ নভেম্বর লন্ডন স্টক মার্কেটে ‘বাংলা’ নামে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বন্ডের অভিষেক অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। সেখানেই বাংলাদেশ এবং এর পাশ্ববর্তী দেশসমূহের অর্থনীতির উপর বক্তব্যের একটি পর্যায়ে ‘একসময় ভারত এবং বাংলাদেশ একটি দেশ ছিল, এবং তখন আমরা বেশ ধনী ছিলাম’ এমনটা বলেন মন্ত্রী। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে শোনা যায় মন্ত্রী নিচের কথাগুলো বলছেন–
“At that time we, the Bangladeshis were also part of India. So we can also claim that we were, once upon a time we were a rich country. Country claim like that. We were a part of India. Is that true? So India was a number one country, can`t we say that we were also number one country?”
বাক্যগুলোতে বেশ কয়েকবার ইংরেজি were (ওয়্যার) শব্দটি এসেছে। এর মধ্যে প্রথম বাক্যে খুবই স্পষ্ট শোনা যায় মন্ত্রী were এর উচ্চারণ ‘ওয়্যার’ করছেন। বাকি were গুলোর উচ্চারণ কিছুটা অস্পষ্ট। কারো কাছে are-ও মনে হতে পারে। বিশেষ করে ‘We were a part of India’ বাক্যটিতে তার উচ্চারণ কিছুটা অস্পষ্ট। যদিও খুবই খেয়াল করে শুনলে were-ই শোনা যায় তার মুখে। প্রথম বাক্যের প্রথম তিনটি শব্দ (At that time) থেকেই স্পষ্ট মন্ত্রী বর্তমানের কথা বলছেন না। তিনি অতীতের কোনো এক সময়ের কথা বলছেন। আবার ওই বাক্যটিতেই were বলা শব্দটি তার মুখ থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে ভিডিওতে। দ্বিতীয় বাক্যে থাকা ‘once upon a time’ শব্দগুলি থেকে আবারও স্পষ্ট মন্ত্রী বেশ দূর অতীতের কোনো এক সময়ে আমাদের দেশ যে ধনী একটি দেশ ছিল তা বলছেন। প্রথম দুটি বাক্যের ধারাবাহিকতায় মন্ত্রী চতুর্থ বাক্যে এসে অতীতের কথাই বলেছেন এভাবে ‘We were a part of India. Is that true?’
সবশেষ বাক্যে আছে was শব্দটি। তিনি বলেছেন, “So India was a number one country, can`t we say that we were also number one country?” বাংলায় শেষের চারটি বাক্য অনুবাদ করলে দাঁড়ায়– “আমরা ভারতের অংশ ছিলাম, এটা সত্যি কিনা? ভারত ছিল এক নম্বর (ধনী) দেশ, তাহলে কি আমরাও বলতে পারি না যে, আমরাও এক নম্বর (ধনী) দেশ ছিলাম?”
এর মাধ্যমে সুশিক্ষিত শ্রোতা মাত্রই এটি স্পষ্ট যে, মন্ত্রী পূর্বের সময়কার কথা বলছেন যখন ভারত-বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একই রাষ্ট্র ছিল। সে সময় এই অঞ্চলটি নানা দিক থেকেই বিশ্বে বিশেষ সমাদৃত ছিল এর ধন দৌলতের কারণে। কিন্তু মন্ত্রীর বক্তব্যের তাৎপর্য না বুঝেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি ও জামায়াত শিবির পরিচালিত কিছু পেজ ও গ্ৰুপে এই বক্তব্যকে এমন ক্যাপশনে ছড়ানো হয় যে, এখানে বর্তমানের কথা বলা হয়েছে। এবং তাদের অশিক্ষিত অনুসারীরা উক্ত ইংরেজি বক্তব্যের মর্মার্থ না বুঝেই সেটিকে ভাইরাল করছেন।
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে ‘বাংলা’ নামে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বন্ড তালিকাভুক্তির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে টাকার অন্তর্ভুক্তি ঘটলো। যা বিশ্ব অর্থনীতে বাংলাদেশের একটি বড় পদক্ষেপ। এটির মাধ্যমে বাংলাদেশের দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের সম্ভাবনার পথ চলার একটি ধাপ শুরু হলো। যা আমাদেরকে ২০৪১ এর স্বপ্ন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মানে সহায়তা করবে। দেশের অর্থনীতির এই অবিস্মরণীয় উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই একটি পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যের একটি ছোট অংশ কেটে, এবং নিজে না বুঝেই বিতর্কিত ক্যাপশনে শেয়ার করা- দেশের উন্নয়নকে থমকে দেয়ারই ষড়যন্ত্র।