ডেস্ক নিউজ
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের সংকল্প পূরণে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এ সূচনা হলো দেশের প্রথম অন্তর্ভুক্তিমূলক স্নাতক প্রোগ্রাম ‘আইইউবি অ্যারোজ’। শনিবার (১৮ ডিসেম্বর ২০২১) ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আইইউবির নিজস্ব ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অ্যারোজ প্রোগ্রামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
‘ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড আইইউবি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমাদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইউবি’র উপাচার্য ড. তানভীর হাসান। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, আইইউবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ার আব্দুল হাই সরকার, দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক।
আইইউবি অ্যারোজ প্রোগ্রামের অধীনে এখন থেকে প্রতিবছর ৫০ জন শিক্ষার্থীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, মেন্টরিং, ইন্টার্নশিপ, চাকরির সুযোগ এবং শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হবে। বাংলাদেশের অন্যান্য স্নাতক প্রোগ্রামের সাথে অ্যারোজ-এর পার্থক্য হলো এখানে উচ্চমাধ্যমিক বা এ-লেভেল পর্যায়ের ফলাফলই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়। অ্যারোজ প্রোগ্রামের জন্য একেকজন শিক্ষার্থীর প্রতিভা, নেতৃত্বগূণ, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং দেশপ্রেমকেও বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর অ্যারোজ প্রোগ্রামকে অন্তর্ভুক্তিমূলক বলার কারণ হলো, ছেলে-মেয়ে, ধনী-গরিব, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী এই প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমাদ বলেন, শুধুমাত্র আর্থিক অন্তর্ভুক্তিই যথেষ্ট নয়। অন্তর্ভুক্তি হতে হবে সবকিছু নিয়েই। একজন মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, পরিবহন ইত্যাদির মতো বহুমাত্রিক চাহিদা রয়েছে। আইইউবি অ্যারোজ প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের সেই বহুমাত্রিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তাদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। আমার মনে হয় এ বিষয়টিই এই প্রোগ্রামের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক।
আইইউবি উপাচার্য তানভীর হাসান বলেন, অ্যারোজ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিল্পে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা মনে করি এতে আমাদের একটা প্রধান অঙ্গীকার পূরণ হবে। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে বাংলাদেশের একটি ছেলে বা একটি মেয়েও যেন প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়। তা সে গ্রাম বা শহর, ধনী বা দরিদ্র পরিবার, যেখান থেকেই আসুক না কেন। এটি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সাথেও সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আইইউবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ার আব্দুল হাই সরকার বলেন, শুধুমাত্র শিক্ষকদের একার পক্ষে অ্যারোজের মতো একটি কর্মসূচিকে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এটিকে কিভাবে আরো টেকসই করা যায়, আমাদের সবার সেই চেষ্টাই করতে হবে। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় দেশের করপোরেট খাত এটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও, আমাদের সমাজে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বৈষ্যম্য। সুতরাং, আইইউবির উচিত্ সমাজের পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের অনুপ্রাণিত করা। অ্যারোজ প্রোগ্রামের মাধ্যমে যদি আইইউবি অল্প কিছু মানুষের জীবনেও পরিবর্তন আনতে পারে, তাহলে সেটাই হবে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আইইউবির মতো দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে দেওয়া। কারণ আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে আমাদের কাছে কি পরিমাণ তথ্য বা জ্ঞান আছে তার ওপর, স্থাবর সম্পদের ওপর নয়।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, মানুষ খুবই আশ্চর্য সম্ভাবনাময় প্রাণী। প্রত্যেকের মধ্যেই একটা মোম আছে, সলতে আছে। অগ্নিসংযোগ করে দিলেই সে আপন মনে আলোকিত হতে থাকে। একটা মোমবাতি যদি আলোকিত হয়, সেখান থেকে হাজার মোমবাতি আলোকিত হতে পারে। আইইউবি তাদের এই অ্যারোজ প্রোগ্রাম দিয়ে যে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করছে, সে আগুন ছড়িয়ে যাক সবখানে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইইউবি’র উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।
আইইউবি অ্যারোজ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করা যাবে জানুয়ারির ৬ তারিখ পর্যন্ত, arrows.iub.edu.bd – এই ওয়েবসাইটে। এইচএসএসি, এ-লেভেল বা সমমানের পরীক্ষায় পাশ করা যে কোনও শিক্ষার্থী এই প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবে। সে জন্য, আইইউবির নিয়মিত ভর্তি ফরম পূরণের পাশাপাশি, অ্যারোজের জন্য বাড়তি কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তাদের।
আইইউবির সম্মানীয় অধ্যাপক ড. নিয়াজ জামানের নেতৃত্বে একটি জুরি বোর্ড প্রাথমিক আবেদনপত্রগুলো যাচাই বাছাই করে একটি ছোট তালিকা প্রণয়ন করবেন। সেই তালিকায় স্থান পাওয়া আবেদনকারীদের এরপর মৌখিক এবং সাইকোমেট্রিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। তারপর সেখান থেকে ৫০ জনকে চূড়ান্ত করা হবে। তারাই হবে আইইউবি অ্যারোজ প্রোগ্রামের প্রথম ব্যাচ। তাদের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে ২০২২ সালে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া স্প্রিং সেমিস্টারে।
অনুষ্ঠানে কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার কবির, আইইউবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যসহ বিভিন্ন স্কুলের ডিন, শিক্ষক-কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।