ডেস্ক নিউজ
করোনার সম্মুখযোদ্ধা হিসাবে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যর্মীদের সম্মানী (দুই মাসের অতিরিক্ত বেতন) ভাতাসহ তিনটি কর্মসূচি চালু থাকছে আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেটে। বাকি দুটি হচ্ছে-সম্মুখযোদ্ধা হিসাবে সরকারি চাকরিজীবীদের মৃত্যুজনিত আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং কোভিড-১৯ প্রভাবে কর্মহীনদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ঋণ দেয়া। এসব কর্মসূচি সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসাবে থাকবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ খুব শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, উল্লেখযোগ্য তিনটি কর্মসূচি আগামী বাজেটে রাখার উদ্যোগ খুবই ভালো। কারণ করোনার প্রভাবে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এর বিপরীতে কর্মসৃজন কর্মসূচি চালু রাখার উদ্যোগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে সম্মুখযোদ্ধা হিসাবে বিশেষ করে ডাক্তার, নার্স কাজ করছেন তাদের সম্মানী ভাতা দিতে হবে। এতে তারা আরও বেশি উৎসাহ নিয়ে কাজ করবেন। তারা মানবিক হিসাবেও কাজ করছেন। উচিত হবে এ কর্মসূচি চালু রাখা। এ মুহূর্তে অর্থনীতি ঠিক রাখতে হলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির দিকে আরও জোর দিতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ এসব কর্মসূচি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে পড়বে।
কর্মসংস্থান : করোনার প্রভাবে অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ড. আবুল বারকাতের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে ৬ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার মানুষ কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। শুধু লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়েছেন ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭১ জন। এর মধ্যে ১ কোটি ৪৪ লাখ কর্মী কাজ হারিয়েছেন অর্থাৎ এখনও কাজে ফিরতে পারেননি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নাধীন আছে। এরমধ্যে ৫৭০ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ। বাকি ৯৩০ কোটি টাকা নতুন বাজেটে বরাদ্দ থাকছে। এর মধ্যে এসএমই খাত সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য আগামী বাজেটে এসএমই ফাউন্ডেশনকে ২শ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থাকে (বিসিক) ৮০ কোটি টাকা, জয়িতা ফাউন্ডেশনকে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এনজিও ফাউন্ডেশন ৪০ কোটি টাকা, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ২শ কোটি টাকা, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনকে ১৫০ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে ৭০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডকে ১৫০ কোটি টাকা দেয়া হবে।
উল্লিখিত এসব প্রতিষ্ঠান বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে স্বল্প সুদে ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করবে। বিশেষ করে গ্রামীণ কর্মসংস্থানকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে।
স্বাস্থ্যকর্মী সম্মানী : কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন চিকিৎসাকর্মীরা। এ জন্য চিকিৎসা সেবায় জড়িত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এককালীন সম্মানী ভাতা (দুই মাসের অতিরিক্ত বেতন) দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয় ১৫০ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৪০ ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে ২ মাসের বেতন সমতুল্য সম্মানী ভাতা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ডাক্তার আছেন ২ হাজার ৭৮৩ জন। এছাড়া ১ হাজার ১৫২ জন নার্স ও দুই হাজার ৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এক্ষেত্রে ব্যয় হয় ৩১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মানবিক দিক থেকে সম্মুখযোদ্ধা হিসাবে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ কাজ করতে গিয়ে অনেক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ফলে তাদের যে সম্মানী দেয়া হচ্ছে এ করোনাকালীন, তা আগামী অর্থবছর বাজেটেও চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মৃত্যুজনিত ক্ষতি : এদিকে করোনার মধ্যে মাঠপর্যায়ে ত্রাণ বিতরণসহ সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে জড়িত আছে সরকারি চাকরিজীবীরা। আর এ কাজটি করতে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান চালু করা হয় চলতি অর্থবছরের বাজেটে। বিশেষ করে বেতন স্কেল অনুযায়ী প্রথম থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত কর্মকর্তা পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার বিধান চালু করা হয়। পাশাপাশি মৃত্যু কর্মকর্তার বেতন গ্রেড ১০ থেকে ১৪ পর্যন্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। আর গ্রেড ১৫ থেকে ২০-এর মধ্যে দেয়া হলে ২৫ লাখ টাকা।
এ জন্য চলতি বাজেটে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত চাকরিজীবীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ নীতিমালার আওতায় ১শ জনের উপরে মৃত চাকরিজীবীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে অনেক পরিবার। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাব আরও বেড়ে গেছে। সহসা এটি শেষ হচ্ছে না। ফলে বিদ্যমান এ আর্থিক ক্ষতিপূরণ কর্মসূচি আগামী অর্থবছরেও চালু রাখা হবে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, এরই মধ্যে করোনার বাড়ার প্রতিদিনই বাড়ছে সরকারি চাকরিজীবীদের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আবেদনের তালিকাও। ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই ধরনের ক্ষতিপূরণ আবেদন আসছে। এর মধ্যে করোনাকালীন মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে যেসব সরকারি চাকরিজীবী মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। করোনায় কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সরকারি চাকরিজীবীর মধ্যে রয়েছেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব নরেন দাস, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী, সিলেট এমএসজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মঈন উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান।