ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা দেশের উন্নয়ন চায় না, তারা অলস বসে থাকবে না। দেশের চলমান অগ্রযাত্রায় আবার আঘাত করতে পারে। এ আঘাত হয়তো সামনে আরও আসবে। এজন্য সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার আব্বা যখন দেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই ১৫ আগস্ট ঘটেছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে রোববার সকালে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যায়ের সামনে এ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। ঠিক সেখানে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা সংঘটিত হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষকে আর শোষণ করা যাবে না। স্বাধীনতার চেতনায় জয় বাংলা ফিরে এসেছে। জাতির পিতার নাম আবার বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে। এগুলো যারা সহ্য করতে পারবে না, তারা বসে থাকবে না। তারা আবার আঘাত করবে। বাংলাদেশকে আবারও জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করবে। সেজন্য আমি দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার সেই সময়ের বক্তৃতাগুলোর মাধ্যমে সব স্পষ্ট হয়ে যায়। কোটালীপাড়া বোমা পুঁতে রাখার আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ শতবছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে তিনি (খালেদা) বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারবে না।’ এগুলোর তো রেকর্ড আছে। এ বক্তৃতা তিনি আগাম দিলেন কীভাবে? তার মানে আমাকে হত্যা করা হবে। এ পরিকল্পনা তারা নিয়ে ফেলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে ক্রসফায়ার ও অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়েছিল। এখন তাদের (বিএনপি) সঙ্গে বসতে হবে, কথা বলতে হবে, খাতির করতে হবে। তাদের ইলেকশনে আনতে হবে। এত আহ্লাদ কেন-আমি তো বুঝি না। বাংলাদেশে কি আর মানুষ নেই? বিদেশিদের কাছে গিয়ে অনেকে কান্নাকাটি করেন কোনোমতে তাদের একটু জায়গা দেওয়া যায় কি না? জায়গা দেবে কি দেবে না, সেটা ভাববে জনগণ। সেই সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ।
২১ আগস্টে রশিদ-ডালিম দেশে ছিল : তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় খুনি খন্দকার আব্দুর রশিদ ও শরীফুল হক ডালিম বাংলাদেশে অবস্থান করে। তিনি বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এজাতীয় ঘটনা ঘটতে পারে না। লক্ষ্য তো ছিল আমাকে হত্যা করা। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। তিনি বলেন, ডালিম ও রশিদ যে ঢাকায় ছিল, এটা তো অনেকেই জানেন। হামলার পরও যখন খুনিরা দেখল যে, আমি বেঁচে আছি, তখন তারা দেশ থেকে পালিয়ে যায়। খালেদা জিয়া তাদের যেভাবেই হোক দেশ থেকে চলে যেতে সাহায্য করেন। এটা তো বাস্তব কথা। শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, তাদের কে এনেছিল? তারা এলো, আবার তারা চলেও গেল? বিভিন্ন দেশে কেউ কেউ পলাতক হয়ে আছে।
রাখে আল্লাহ মারে কে : বারবার হামলার শিকার হয়েও প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এদেশের কল্যাণের জন্য, এদেশের মানুষের জন্য। রাখে আল্লাহ মারে কে। মারে আল্লাহ রাখে কে। আমি গুলি, নয় বোমা, নয় গাড়ি আক্রমণের শিকার হয়েছি। এরপরও বেঁচে আছি। দেশের কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট ছিল-২০২১ সালে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করব। সেটা আমরা করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে যারা বাংলাদেশ চালাবে, তারা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি, এটাই হয়তো বড় অপরাধ। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত সফলভাবে দেশ চালিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলাম। সেজন্যই তো ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটিয়ে আমাকে শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন। ১৮ বছর হয়ে গেল। যারা স্পিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন, তারা কষ্টভোগ করছেন। যত বয়স বাড়ছে, ততই তাদের শরীরের যন্ত্রণা বাড়ছে। আমি সবার খোঁজ রাখি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে তাদের সাহায্য করি। আমার যতদূর সাধ্য করছি। আমি কাউকে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছি। কাউকে জমি কিনে দিয়েছি। ঘর করে দিয়েছি। মাসোহারার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রতিমাসে ওষুধ কেনার টাকা দিয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু তারা যা হারিয়েছেন, সেটা তো ফেরত দিতে পারব না। তাদের শরীরের যন্ত্রণা তো প্রশমন করতে পারব না। সেদিন ওই র্যালিতে আমরা যারা ছিলাম, তাদের যেন নতুন জন্ম হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব জনগণের প্রতি। আর যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে, আমরা সেই দায়িত্বপালন করে যাব। এটাই হচ্ছে আজকের প্রতিজ্ঞা।
নির্বাচন সামনে এলেই চক্রান্ত শুরু হয় : আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। তিনি বলেন, যে দলের নেতাই নেই, সাজাপ্রাপ্ত অথবা পলাতক। তারা নির্বাচন করবে কী, আর কীভাবে ভোট পাবে। ভোট কাকে দেখে দেবে-এটাই তো প্রশ্ন। এরপরও অনেক চক্রান্ত আছে। এখনো যেমন নানা রকমের চক্রান্ত। ইলেকশন (নির্বাচন) সামনে এলেই চক্রান্ত শুরু হয়। কিন্তু এ দেশের মানুষের ওপর আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে।
শুধু সমালোচনা করলেই হবে না, সহযোগিতাও দরকার : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক মন্দার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার যে ধাক্কা, সেটা আমাদের দেশেও পড়েছে। এ থেকে দেশের মানুষকে কীভাবে আমরা রক্ষা করব, সেটাই আমাদের চিন্তা। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার। শুধু সমালোচনা আর কথা বললে হবে না-সবাইকে কাজও করতে হবে। যেন এ ধাক্কা থেকে দেশের মানুষ রেহাই পায়, রক্ষা পায়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্টের হামলায় নিহতদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আহত ও নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে তিনি কুশলবিনিময় করেন। নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনাসভার শুরুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মোনাজাত করা হয়। আলোচনাসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।