ডেস্ক নিউজ
আত্মপ্রত্যয়ী এক কর্মবীর- হিসেবে সহজেই অভিহিত করা যায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামকে।
পায়ে হেঁটে স্কুলে রওনা হতেন। সোয়া কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাসে ওঠা। প্রতিদিন মায়ের দেয়া ২০ পয়সা ছিল সম্বল। এভাবেই কঠোর সংগ্রাম আর অনুশাসনের শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনে বেড়ে ওঠা তার।
নিজের বাড়িতে পুরনো কয়েকটি মেশিন নিয়ে পোশাক তৈরি কারখানা স্থাপন। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে আজ এসে ১৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী দেশের অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন সফলতার সাথেই।
জীবন সংগ্রাম আতিককে অনুধান করতে শিখেয়েছে মেহনতি মানুষের ব্যথা-বেদনা। তাদের সঙ্গী হয়েছেন, নিজ কারখানায় একসঙ্গে মাটিতে বসে শ্রমিকদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খান। শ্রমিক কল্যাণে যত রকমের উদ্যোগ নেওয়া যায়, তার সবই করে চলেছেন এই সংগ্রামী।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধ্বসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত রপ্তানি হুমকিতে পড়ে। বিজিএমইএ-র সভাপতি হিসেবে সেই কঠিন সময়ে পোশাক খাতের ভবিষ্যৎ বিপযয় ঠেকাতে নেতৃত্বে দিয়েছেন। তার সময়েই দেশের তৈরি পোশাক খাতে সবচেয়ে বড় সংস্কারের সূচনা হয়। যার ফলে বাংলাদেশের এই খাতটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়ে ওঠে।
ব্যবসায়ের পাশাপাশি সামান্য সময়ের জন্য ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের উজ্জল উপস্থিতি রেখেছেন আতিক।
মেয়র হিসেবে ৯ মাস ২৩ দিনের দায়িত্ব পালনে মহা কর্মযজ্ঞের ছাপ রেখেছেন তিনি। কিন্তু উত্তর ঢাকাকে পরিকল্পনামাফিক সাজাতে ও হাতে নেওয়া কাজ শেষ করতে এটি খুবই কম সময়। তাই সুস্থ, সচল, সুন্দর ঢাকা গড়তে আগামী পাঁচ বছরের যে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তা বাস্তবায়ন করতে জনগণের ভোট ও দোয়াপ্রার্থী তিনি।
নেতৃত্ব
আতিকুল ইসলাম একজন সফল ব্যবসায়ী, উজানে সাঁতার কেটে যুদ্ধজয়ী এক আদর্শ মানুষ। তৈরি পোশাকশিল্পের একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই আতিকুল ইসলাম বেশি পরিচিত। তবে বেশ কিছু ক্রীড়া এবং সামাজিক কার্যক্রমও তিনি বলিষ্ঠ হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যে কাজে সমাজের ভাল হবে, মানুষের ভাল হবে, তিনি তাতে নিজেকে বিলিয়ে দেন। আর এই তাড়না থেকেই ঢাকা মহানগর উত্তর নিয়ে তিনি বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। একটি সবুজ, চলমান, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত শহর গড়া দৃঢ় প্রত্যয়ী- ব্যক্তিত্ববান ও কর্মঠ আতিকুল ইসলামের বর্তমান লক্ষ্য।
রাজধানী ঢাকায় শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্য পেরিয়ে আসা আতিকুল ইসলাম পণ করেছেন আন্তরিকতা, পরিশ্রম, প্রত্যয় ও স্বকীয় পরিকল্পনা দিয়ে এ শহরকে নতুন করে সাজাবেন। আর এই আন্তরিক ও প্রত্যয়ী ইচ্ছেকে তিনি বাস্তবে রূপ দিতে চান ঢাকা মহানগর উত্তরের সবাইকে সাথে নিয়েই।
আতিকুল ইসলাম এমন একজন মানুষ যিনি সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে পথ হাঁটেন। ভোগ, বিলাসিতা তাকে টানে না। কাজ আর সংকল্পের বাস্তবায়নের মধ্যেই খুঁজে নেন জীবনের প্রাপ্তি। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে যেখানে থেমে যেতে হয়েছে, সেখান থেকেই যাত্রা শুরু করতে চান আতিকুল ইসলাম।
নিজ চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সৃজনশীলতা আতিকুল ইসলাম ইতিমধ্যে তুলে ধরেছেন দেশবাসীর কাছে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর গোটা দেশ যখন শোকে বিহ্বল, স্তম্ভিত, নির্বাক হয়েছিল, তখন আতিকুল ইসলাম মানবতার হৃদয় উন্মোচিত করে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন, পরিশ্রম করেছেন। সেখানে তিনি বিজিএমইএ এর সভাপতি হিসেবে নয়, নিজেকে মেলে ধরেছিলেন একজন সচেতন সমাজকর্মী হিসেবে।
রানা প্লাজা ট্রাজেডির সেই বিপর্যস্ত সময়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল বিদেশি ক্রেতারা এদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেবে, বাংলাদেশ থেকে আর তৈরি পোশাক নেবে না। তাতে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী এই শিল্পখাত ধসে পড়তো, বেকার হয়ে যেত ৪০ লাখেরও উপর পোশাক শ্রমিক, যার বিরূপ প্রভাব এসে পড়তো সামগ্রিক অর্থনীতির উপর।
এই চরম দু:সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প মাথা তুলে দাঁড়াবার সামর্থ্য রাখে। পর্যায়ক্রমে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কারখানার কমপ্লায়েন্স এবং শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া তিনি অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করেন। আতিকুল ইসলামের সময়োচিত সিদ্ধান্ত ও তৎপরতায় দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় এই শিল্পখাত, বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পায় দেশের অর্থনীতি।
বিজিএমইএ এর উদ্যোগে ২০১৪ সাল থেকে আতিকুল ইসলাম শুরু করেন ‘ঢাকা অ্যাপারেল সামিট’ আয়োজন, যা দারুণভাবে প্রশংসিত হয় আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতামহল ও বিশেষজ্ঞদের কাছে। ওই সামিটে বিদেশি ক্রেতারা আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। বিপুল পরিমাণ অর্ডার হয়।
আতিকুল ইসলাম দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইথ প্রাইডে’ এর জনক। আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বেই পোশাক শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল গড়ে তোলে বিজিএমইএ। তার উদ্যোগেই পর্যায়ক্রমে সকল পোশাক কারখানায় দুইজন করে অটিস্টিক কিশোরের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে।
তার দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি বিজিএমইএ এর কার্যক্রম এবং ইমেজ-কে এগিয়ে নিয়েছে নতুন উচ্চতায়।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহনের পর আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভলিবল দল ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ভলিবল টুর্নামেন্ট’- এ চ্যাম্পিয়ন হয়। সেটাই ছিল বাংলাদেশ ভলিবল দলের কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতা।
বেড়ে উঠা ও পরিবার
আতিকুল ইসলামের দেশের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। তবে ১৯৬১ সালের ১ জুলাই বাবার তৎকালীন কর্মস্থল সৈয়দপুরে তার জন্ম। সাংস্কৃতিমনা ও প্রগতিশীল পরিবারের শান্ত ও মিশুক এ ছেলেটি শৈশব ও কৈশোর জুড়ে ছিলেন মা-বাবা আর ভাই-বোনদের চোখের মণি। ঢাকার বিএএফ শাহীন স্কুল ও কলেজ থেকে আতিকুল ইসলাম যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি স্কুল জীবনে তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর সর্বোচ্চ অবস্থানে সফলতার সাথে নেতৃত্ব দেন।
মা মাজেদা খাতুন ও বাবা পুলিশ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মরহুম মমতাজউদ্দিন আহমেদের ১১ সন্তানের সর্বকণিষ্ঠ আতিকুল ইসলাম। স্নেহময়ী ও আদর্শবান মায়ের অসীম অনুপ্রেরণা আর সৎ পুলিশ কর্মকর্তা বাবার অনুশাসনে বেড়ে ওঠা আতিকুল ইসলামের ভাইবোনরা সবাই শিক্ষিত এবং নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত।
বড় ভাই প্রখ্যাত প্রকৌশলী ও সফল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের হাত ধরে ১৯৮৫ সালে আতিকুল ইসলাম ব্যবসা অঙ্গনে প্রবেশ করেন এবং ধীরে ধীরে গড়ে তুলেন স্বনামধন্য ‘ইসলাম গার্মেন্টস’। ব্যবসায়ের শুরু থেকেই তাঁর প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত করে এসেছেন শ্রমিকবান্ধব ও আন্তরিক পরিবেশ। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ১৯ হাজার মানুষ।
মেজো ভাই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জল ইসলাম, যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে সই করেন এবং পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন।
আরেক ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল ইসলাম, যিনি বিডিআর বিদ্রোহের পর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেয়ে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাহিনীটিকে পুনর্জীবিত ও পুনর্গঠন করেন। পরবর্তীতে মইনুল ইসলাম চিফ অব জেনারেল স্টাফ এবং প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের দায়িত্বও পালন করেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের পরিবারের সবাই কিন্তু আমরা ডেডিকেটেড। আমরা চাই যার যা দায়িত্ব সেটা পালন করতে।”
সাদামাটা ও সাংস্কৃতিক আবহে জীবনযাপন
ঘরে আতিকুল ইসলাম একজন অপার স্নেহশীল বাবা আর বন্ধুসম স্বামী। সহজ, সাধারণ লাইফস্টাইলই তাঁর সুখী জীবনের ভিত্তি। স্ত্রী ডেন্টাল সার্জন শায়লা সাগুফতা ইসলাম এবং ‘গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’- এ গ্রাজুয়েশন করা একমাত্র সন্তান বুশরা আফরিনকে নিয়ে আতিকুল ইসলামের দিনযাপন। তার সকল কাজ ও সকল সাফল্যের পেছনেই স্ত্রী শায়লা সাগুফতার সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা রয়েছে।
এই মানুষটির জীবনের মূল লক্ষ্য ভাল কাজ আর কমিটমেন্ট পূরণ করা। ফজরের নামাজ আদায় করে দিন শুরু হয় তার। তারপর সদলবলে মর্নিংওয়াক করেন। এটি তার বহু বছরের অভ্যাস।
নিজের ও প্রিয়জনদের শরীরচর্চ্চায় বিশেষ মনোযোগী তিনি। বন্ধুদের নিয়ে প্রতিদিন ভোরে উত্তরার বাসার পাশে অনেকটা সময় ধরে জগিং করেন। এই এলাকার সাধারণ মানুষদের শরীরচর্চা, স্পোর্টস এবং আড্ডার কেন্দ্র হিসেবে আতিকুল ইসলামের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ‘বাংলাদেশ ক্লাব’। মানবিকতা ও কোমলতায় পূর্ণ আতিকুল ইসলাম মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের কল্যাণে সবসময়ই রয়েছেন অগ্রণী ভূমিকায়। তার উদ্যোগে সেই এলাকায় গঠিত হয়েছে ‘হাঁটি হাঁটি খাই খাই’ নামের এক সংগঠন যার সদস্যরা হাঁটতে ভালবাসেন আর হাঁটতে হাঁটতেই সমাজসেবা করেন।
বাসায় সারা বছর জুড়েই নিয়মিত বসে পারিবারিক আড্ডা ও হৈ-হুল্লোড়ের আসর। পারিবারিক আয়োজনগুলোতে সংস্কৃতিমনা আতিকুল ইসলাম বাদ রাখেন না বিনোদনের অংশটুকুও। ঘরোয়া আমেজে থাকে আমন্ত্রিত শিল্পীদের গান পরিবেশনা, যেখানে আতিকুল ইসলামকেও দেখা যায় হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোল নিয়ে নিতে। লোকসংগীতের প্রতি রয়েছে তাঁর বিশেষ অনুরাগ। কোলাহলের বাইরে নিজ গ্রামের পুকুরে মাছ ধরার আনন্দ দারুণ উপভোগ করেন আতিকুল ইসলাম।
ধর্মপ্রাণ আতিকুল ইসলাম রাজধানীর উত্তরখানের মইনারটেক-এ প্রতিষ্ঠা করেছেন দারুল কুরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা। আর তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজ গ্রামসহ দেশের অন্যান্য জায়গাতে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া তিনি সম্পৃক্ত আছেন বিভিন্ন সেবামূলক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে।
নিজের সম্পর্কে
আতিকুল ইসলাম বলেন, “তখন শান্তিনগরে থাকতাম। বাবা-মা আমাকে ভর্তি করেন শাহিন স্কুলে। অন্যতম ডিসিপ্লিনড স্কুল। শান্তিনগরের বাসা থেকে আমি হেঁটে মালিবাগ বাজারে আসতাম। এটাও কিন্তু প্রায় এক কিলোমিটার থেকে সোয়া এক কিলোমিটার। মালিবাগ থেকে হাশেম পরিবহনের বাসে উঠতাম। নামতাম পুরনো এয়ারপোর্টের সামনে। ওইখান থেকে আবার হেঁটে হেঁটে শাহিন স্কুলে যেতাম।
“মাকে আমি মাঝে মাঝে বলতাম শান্তিনগর থেকে মালিবাগ পর্যন্ত যেন রিক্সায় করে আসার টাকা দেন। মা বলতেন, বাবা তোমরা ১১ ভাই-বোন। প্রতিদিন ২০ পয়সা করে দেব। তখন মাঝে মাঝে আমি বিরক্ত হতাম। দেখতাম, আমার বন্ধুরা সবাই গাড়ি করে আসেন। আমি সেই ২০ পয়সা নিয়ে আসতাম।”
এখান থেকেই আতিকুল ইসলামের জীবনের বড় শিক্ষা শুরু জানিয়ে তিনি বলেন, “এর থেকেই শিখেছি আমার জীবনের শৃঙ্খলা। অর্থ হয়তো তারা (মা-বাবা) দিতে পারতেন। কিন্তু দেন নাই। সেইভাবেই আমরা গড়ে উঠেছি। তারা চেয়েছেন ১১ ছেলেমেয়েই যেন মানুষ হন।
“আজকের সেই ২০ পয়সায় যাওয়া-আসার আতিক। সে হয়েছে বিজিএমইএর সভাপতি। সে হয়েছে ১৯ হাজার শ্রমিক কর্মচারীর চাকরিদাতা। ঢাকা উত্তরের মেয়র হয়েছে।”
পরিবারের আরেকটি শিক্ষার কথা উল্লেখ করে আতিক বলেন, “আমার মা আমার জামা সেলাই করে বালিশের তলায় রেখে দিতেন। মাকে বলতাম, মা আপনি বালিশের তলায় রেখে দিয়েছেন কেন? মা বলতেন বাবা, আমার ১১ ছেলেমেয়ে মানুষ করতে গেলে আমি যে তোমার শার্টটা ইস্ত্রি করবো সেটার বিল কিন্তু দিতে পারবো না। সুতরাং শার্টটা বালিশের তলায় রেখে দিলে অটোমেটিকে ইস্ত্রি হয়ে যাবে।”
“এই যে, আমি শিখেছি মা কিভাবে কষ্ট করে আজকে আমাদের এখানে নিয়ে এসেছেন। মা-বাবার দোয়াই আমার সঙ্গে রয়েছে।”
আতিকুল ইসলামের অনুভূতি, “আমার যে বেড়ে ওঠা সেখান থেকেই আমি সংগ্রামী মানুষগুলোর জীবন আমি বুঝি। আমি কারখানার যে শ্রমিক ভাইবোনেরা আছেন, আমি তাদের সঙ্গে খেতে কিন্তু খুব পছন্দ করি। তাও যখন দুপুরে মাঝে মাঝে ওদের সঙ্গে খাই, ওরা কিন্তু বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে খেতে কি আনন্দ যে হয়!”
“আমাদের অফিসে চেয়ার-টেবিল আছে। কিন্তু মাটিতে বসে তাদের সাথে খাওয়া, তাদের সঙ্গে গল্প করা, কথা বলা। এই শ্রমিকরাই কিন্তু আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। তাই আমি বুঝি শ্রমিকদের ব্যাথা কোথায়। তাই আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে সিটি করপোরেশনের যারা শ্রমিক আছে তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রতি অনুযায়ী ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে হাত দিয়েছি। যারা বস্তিতে থাকে তারা আর বস্তিতে থাকবে না। তারা চলে যাবে ফ্ল্যাটে।”
আতিকুল বলেন, “অনেক কঠিন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে জীবন পার করতে হয়েছে আমাকে। সেই পথেই বিজিএমই-এর পরিচালক। তারপর সবচেয়ে তরুণ সহ-সভাপতি ছিলাম, সেখান থেকে সভাপতি এবং এরপর ঢাকা উত্তরের মেয়র।”