মোঃ মনির হোসেন। বয়স ৩৪ বছর। ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জনক মনির থাকেন ঢাকা’র মোহাম্মদপুরে। স্ত্রী ও মেয়ে লামিয়াকে নিয়ে বেশ ভালোই কাটছিলো তাঁর দিনগুলো। বেসরকারী চাকুরিজীবী মনির হোসেনের সংসারে কিছুটা টানাপোড়েন ছিল বটে, তবে ভালোবাসার কমতি ছিল না।
কিন্তু বছর তিনেক আগে আচমকাই পাল্টে যেতে থাকে পরিস্থিতি। মনিরের আচরণ-জীবনধারায় আসে বড় রকমের পরিবর্তন। অস্বাভাবিক রকমের উগ্রতা, বাসায় সময় দিতে না চাওয়া, নতুন বন্ধুদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া- এমন বেশকিছু উপসর্গ দেখা দেয়। চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হতে থাকে, শারীরিক অবস্থাও খারাপ হতে থাকে প্রতিনিয়ত।
উপায়ন্তর খুঁজে পাচ্ছিলেন না মনিরের স্ত্রী আফসানা বেগম। ‘বদলে যাওয়া মনির হোসেন’কে তার বড্ড অচেনা লাগছিলো। খোঁজখবর নিয়ে আফসানা জানতে পারলেন, মনির ইয়াবায় আসক্ত হয়েছেন সম্প্রতি।
আফসানা দ্রুত যোগাযোগ করলেন তেজগাঁস্থ সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। সেখানে ভর্তি করা হলো মনিরকে। তিন মাসের চিকিৎসা ও সুষ্ঠু নির্দেশনায় মনির হোসেন এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। সংসারেও ফিরে এসেছে সেই চিরাচরিত ভালোবাসা।
এরকম অসংখ্য গল্প ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের আনাচেকানাচে। নিছক কৌতুহল কিংবা পারিবারিক হতাশা থেকে অনেকেই জড়াচ্ছেন মাদকে। বিশেষত কিশোর- যুবকদের মধ্যে এর হার বেশি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে দেরি করেনি। ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ এই সময়োপযোগী স্লোগানে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে দেশব্যাপী। খোদ প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন।
জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সফল বাংলাদেশে পরিচালিত হচ্ছে মাদকবিরোধী অভিযান। এই অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৬ জন। এছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণে মাদকদ্রব্য। অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৩৭৮ জন মাদক কারবারি।
এছাড়াও সরকার মাদক চোরাচালানের রুটগুলোকে কেন্দ্র করে নিয়েছে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা। মাদক সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতেও পর্যাপ্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে।
মাদক নির্মূলে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়ে থাকে সরকারের তরফ থেকে। পাশাপাশি মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য সারাদেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ৭টি নিরাময় কেন্দ্র। এছাড়াও সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় সারাদেশে পরিচালিত হচ্ছে প্রায় ২৫০ এর অধিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র।
সরকারের সফল তৎপরতার মধ্যেই আজ দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। ‘নেশা নয়, স্বাস্থ্যই হোক জীবনের নতুন প্রত্যাশা’- এই প্রত্যয় নিয়ে আজ ২৬ জুন বাংলাদেশসসহ সারাবিশ্বে পালিত হবে দিবসটি। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী।