ডেস্ক নিউজ
মহামারীতে শ্রমবাজারের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ফের আশার আলো হয়ে এসেছে মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ থেকে দ্রুত কর্মী নেওয়া শুরু করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী। প্লান্টেশন খাতে ৩২ হাজার কর্মী নিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন দিয়েছে মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা। এ জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে মেয়াদ শেষ হওয়া এমওইউ রিনিউ করে দ্রুত কর্মী নিয়োগ শুরু করতেও চায় মালয়েশিয়া। ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি এখন নির্ভর করছে বাংলাদেশের ওপর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর চিঠির বিষয়ে ইতিমধ্যে ইতিবাচকভাবে কাজ শুরু করেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ১৯ মে প্রবাসী প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদকে চিঠি দেন। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকবিষয়ক চিঠিতে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী উল্লেখ করেন, মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা ৭ এপ্রিল সোর্স কান্ট্রি থেকে প্লান্টেশন খাতে ৩২ হাজার বিদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে বিশেষ অনুমোদন দিয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেস বা এসওপি কঠোরভাবে মেনে এ নিয়োগের কথা বলেছে মন্ত্রিসভা। করোনা মহামারীর মধ্যে প্রত্যেককে ভ্যাকসিন দিয়ে দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। চিঠিতে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমি ১৬ ফেব্রুয়ারি আমাদের ভার্চুয়াল মিটিংয়ে একমত হওয়ার সিদ্ধান্তগুলোর কথা উল্লেখ করতে চাই।’ আগামী পাঁচ বছরের জন্য সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ বাড়াতে খুব শিগগির মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব উত্থাপনের কথা উল্লেখ করে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেন, এতে বাংলাদেশ প্লান্টেশন খাতে কর্মী পাঠাতে পারবে। পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে মালয়েশিয়া সরকারের সময় সময় দেওয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশ অন্য সব খাতে কর্মী পাঠাতে পারবে উল্লেখ করেন মালয়েশিয়ার মন্ত্রী। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর এ অবহিতপত্রকে বাংলাদেশ অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে হওয়া বৈঠকের পর এ চিঠির মাধ্যমে আলোচনা আবার সামনে এলো। ইতিমধ্যেই প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী পাল্টা চিঠি দিয়ে প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। শ্রমবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার আগ্রহেই বৈঠকের আয়োজন হয় দুই দেশের কর্মকর্তাদের। সে বৈঠকেই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তাবও নিয়ে আসে মালয়েশিয়া। আগেই দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় সে প্রস্তাবে মৌখিক সম্মতিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে রিক্রুটিং এজেন্সীর পরিধি বাড়ানোর কথা তোলেন বাংলাদেশের আমলারা। ফলে আটকে যায় সবকিছুই। ঝুলে যায় সম্ভাবনার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। জানা যায়, কর্মীদের ক্রমাগত প্রতারিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো কর্মী নেওয়া বন্ধ হয়। এরপর নানান দেরদরবার করে ২০১২ সালে জিটুজি পদ্ধতিতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ধীরগতির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে যুক্ত করে জিটুজি প্লাস পদ্ধতি শুরু করে মালয়েশিয়া। প্রায় ২ লাখ কর্মী মালয়েশিয়া গেলেও সেখানে গিয়ে প্রতারণার অভিযোগ আসেনি। তার পরও জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে অর্থ আত্মসাতের কথা বলে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়ে তদন্ত করে মালয়েশিয়া। তদন্তে মালয়েশিয়ার কমিটি অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে বাজার পুনরায় চালুর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়।