ডেস্ক নিউজ
ইউরোস্ট্যাট ইইউ-এর আমদানির পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৩১৬ কোটি ডলারের পণ্য।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা এখন টালমাটাল। এই যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আশা জাগানিয়া খবর দিচ্ছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর সারা বিশ্ব থেকে ইইউর আমদানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সে হিসাবে ইইউতে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে সবার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট ইইউ’ প্রকাশিত আমদানির পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালের প্রথম সাত মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৩১৬ কোটি বা ১৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত বছরের প্রথম সাত মাসে ইইউতে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করেছিল ৯৭৬ কোটি বা ৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।
ইউরোস্ট্যাট-এর তথ্যমতে, ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত আমদানির তুলনায় ২০২২ সালের এই সময়ে বিশ্ব থেকে ইইউর আমদানি প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে চীন থেকে গত সাত মাসে ইইউ দেশগুলোর পোশাক আমদানি ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ ১৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে তুরস্ক। দেশটি রপ্তানি করেছে ৭০৮ কোটি বা ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পরই অবস্থান করছে দেশটি। এই পরিমাণ রপ্তানির মাধ্যমে এ সময়ে দেশটির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।
তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ইইউতে ৩১৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ভারত। এর মাধ্যমে এ সময়ে দেশটির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ইইউতে এ সময়ে ভিয়েতনামের রপ্তানি কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটি রপ্তানি করেছে ২৩০ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য। এ সময়ে দেশটির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এরপর উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করা অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- কম্বোডিয়া ৪১ দশমিক ৫০, ইন্দোনেশিয়া ৩০ দশমিক ৮৬, পাকিস্তান ২৮, মরক্কো ১৬ দশমিক ৬৭ ও শ্রীলঙ্কা ১৪ শতাংশ।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ইইউর আমদানিতে একটি লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধির ধারা রয়েছে। তবে বছরের শেষে গিয়ে বিশ্ব থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানি কমতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে খুচরা বিক্রেতারা ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির বিশ্ববাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সংগ্রাম করছে। অনেক ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের খুচরা বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে, যা তাদের ইনেভেন্টরি স্টক বাড়িয়েছে।’
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকা সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ভবন ধসে এক হাজার একশ’র বেশি তৈরি পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও কয়েক হাজার। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতে।
তবে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর থেকে দেশে তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। কারখানাগুলোতে কমপ্লায়েন্স বা নিয়মতান্ত্রিক উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। সে সুবাদে বাংলাদেশের কারখানার বিষয়ে ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস ফিরেছে।
বিদেশিরা তৈরি পোশাক খাতের বিষয়ে এখন ‘ফলো বাংলাদেশ’ (অনুসরণ বা অনুকরণ) বলছেন বলে দাবি করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।
ওই ঘটনার পর কারখানার কর্মপরিবেশ ও ভবন বিষয়ে প্রথম দিকে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তার সুফল বর্তমানে মিলছে বলে জানিয়েছেন খাত-সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।