ডেস্ক নিউজ
করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। করোনা প্রতিরোধে কঠোর ও সীমিত লকডাউনের মধ্যেও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক বাজারেও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের চাহিদাও বাড়ছে। এসব কারণে চলতি বছরের এপ্রিলে ২০২০ সালের একই মাসের তুলনায় আমদানি বেড়েছে। গত বছরের মে মাসের তুলনায় ২০২১ সালের একই মাসে রপ্তানিও বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে আমদানি ও রপ্তানি খাতে ছিল নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
উদ্যোক্তারা জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-কারখানা সচল রাখা হয়েছে। ফলে উৎপাদনব্যবস্থা সচল ছিল। আর কঠোর লকডাউন বেশিদিন ছিল না। বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সম্পর্ক আছে-এমন সব দেশের মধ্যে ভারত ছাড়া অন্যদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল ছিল। ভারতে করোনার হানা ব্যাপক হলেও তাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়নি। এসব কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়তে শুরু করেছে। রপ্তানি বাড়লে আমদানিও বাড়ে। কেননা কাঁচামাল হিসাবে পণ্য আমদানি করতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের মে মাসে রপ্তানি আয় কমেছিল ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। চলতি বছরের একই মাসে বেড়েছে ১১২ দশমিক ১১ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই-মে এই ১১ মাসে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির হার নেতিবাচক ছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি ২ দশমিক ৭১ শতাংশ কমলেও নিটওয়্যার রপ্তানি ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। গড়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। হোম টেক্সটাইলের ৫৪ দশমিক ১২ শতাংশ, কৃষিপণ্যে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, পাটজাত পণ্যে ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ, চমড়ায় ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ. রাসায়িক পণ্যে ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ ও প্রকৌশল পণ্যে ৬৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকা। আমেরিকা করোনার টিকা দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় সবই খুলে দিয়েছে। করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় বাইডেন প্রশাসন কয়েক লাখ কোটি ডলারের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ফলে অর্থনীতি আরও সচল হচ্ছে। ইউরোপের দেশগুলো করোনাকে নিয়ন্ত্রণে এনে প্রায় সবকিছু খুলে দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যেও একই অবস্থা। এসব মিলে দেশের রপ্তানি পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে বাড়তে শুরু করেছে রপ্তানি আয়ও। অর্থনীতি সচল হওয়ায় বকেয়া রপ্তানি আয়ও দেশে আসা শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, করোনার নতুন আর কোনো ঢেউয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা বন্ধ হবে বল মনে হয় না। ফলে বিদেশের বাজারে রপ্তানি পণ্যের চাহিদা বাড়বে। এ সময়ে বাজার ধরতে হলে এখনই প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি থাকতে হবে। এজন্য প্রণোদনা প্যাকেজগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। তবে করোনার অভিঘাত কাটাতে বেশ সময় লাগবে। প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের এপ্রিলে আমদানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪৪ দশমিক ২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১৯ দশমিক ০২ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে এ খাতে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে শিল্পের যন্ত্রপাতি, চিনি ও জ্বালানি তেল ছাড়া অন্য প্রায় সব ধরনের পণ্যের এলসি খোলা বেড়েছে। সব খাতে এলসি খোলা বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালের এলসি খোলা বেড়েছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন শিল্প কম হচ্ছে। এ কারণে নতুন শিল্পের যন্ত্রপাতি আসছে না। উদ্যোক্তারাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সূত্র জানায়, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল মজুত রয়েছে। লকডাউনের কারণে চাহিদা কমেছে। এজন্য জ্বালানি তেল আমদানিও কম। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে এর দামও কম। একই ঘটনা চিনির ক্ষেত্রেও।