ডেস্ক নিউজ
একই পদ্ধতিতে আসাদগেট থেকে মিরপুর-১ পর্যন্ত ভাড়া আসছে ১৩ টাকা, যা এতদিন আদায় করা হতো ২৫ টাকা। মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ঢাকেশ্বরীগামী মিরপুর সুপার লিংক, ঘাটারচর থেকে উত্তরাগামী প্রজাপতি ও পরিস্থান, গাবতলী থেকে গাজীপুরগামী বসুমতি পরিবহনের বাসে এই পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় শুরু হয়েছে। আগামী রোববার আরও তিনটি রুটে অছিম পরিবহন, রাজধানী পরিবহন ও নূরে মক্কায় চালু হচ্ছে এই পদ্ধতি। এক মাসের মধ্যে সব বাসেই চালু হবে এই পদ্ধতি।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা ইয়াসমিন আরার কর্মস্থল ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে। এটুকু পথে তিনি ২০ টাকা বাস ভাড়ায় যাতায়াত করতেন। এখন থেকে প্রতিবার ৭ টাকা ভাড়া কমবে তার।
সরকারনির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় ঠেকাতে ই-টিকেটিং যে একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে যাচ্ছে, তা বোঝা গেল এই পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালুর প্রথম দিনই।
এই পদ্ধতিতে আগে দূরত্ব অনুযায়ী টিকিট কেটে মিরপুর সুপার লিংকে শেওড়াপাড়া থেকে ধানমন্ডি-২৭ নম্বরের ভাড়া এসেছে ১৩ টাকা।
একই পদ্ধতিতে আসাদগেট থেকে মিরপুর-১ পর্যন্ত ভাড়া আসছে ১৩ টাকা, যা ওয়েবিলে এতদিন আদায় করা হতো ২৫ টাকা।
বৃহস্পতিবার মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ঢাকেশ্বরীগামী মিরপুর সুপার লিংক, ঘাটারচর থেকে উত্তরাগামী প্রজাপতি ও পরিস্থান, গাবতলী থেকে গাজীপুরগামী বসুমতি পরিবহনের বাসে এই পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় শুরু হয়েছে।
আগামী রোববার আরও তিনটি রুটে অছিম পরিবহন, রাজধানী পরিবহন ও নূরে মক্কায় চালু হচ্ছে এই পদ্ধতি। এক মাসের মধ্যে রাজধানীর সব বাসেই ভাড়া আদায় করতে দূরত্ব হিসাব করে আগেই টিকিট কাটা হবে।
বাস কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিটি বাস স্টপেজে তাদের লোক থাকবে। তাদের থেকে টিকিট কেটে বাসে উঠতে হবে। স্টপেজের বাইরে থেকে কোনো যাত্রী তোলা হবে না। ছাত্রছাত্রীদের জন্য থাকছে অর্ধেক ভাড়ার ব্যবস্থা।
প্রথম দিন যাত্রীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এই পদ্ধতিতে।
ই-টিকেটিংয়ে বিভিন্ন রুটের ভাড়া। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকায় বাস ভাড়া ১০ বা ১৫ বা ২০ বা ২৫ বা ৩০ টাকা দিয়ে অভ্যস্ত যাত্রীরা দেখলেন ভাড়া হচ্ছে ১৩ টাকা বা ১৭ টাকা বা ১৯ টাকা। সরকারনির্ধারিত হারে একজন যাত্রী যত কিলোমিটার যাবেন, তিনি ভাড়া দেবেন ঠিক ততটুকু দূরত্বের জন্যই। আগের মতো ওয়েবিল পদ্ধতিতে মগবাজার নেমে মতিঝিলের ভাড়া দিতে হচ্ছে না।
আসাদগেট এলাকায় পরিস্থান পরিবহনের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা মো. মারুফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা সব বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করছি। এখন আর ওয়েবিলে ভাড়া বা বাড়তি ভাড়া আদায়ের সিস্টেম নেই। মেশিনে যে ভাড়া আসে তাই নেয়া হচ্ছে।’
তানবিন খান নামে এক যাত্রী ফেসবুকে লেখেন, ‘ভালো একটা দিক হলো একদম চার্টের ভাড়াই রেখেছে, কোনো রাউন্ড ফিগার না এবং হাফ পাসের ব্যবস্থাও আছে।’
প্রজাপতি পরিবহনের যাত্রী সুমন মিয়া বলেন, ‘এতদিন এই রুটে বাড়তি ভাড়া আদায় নিয়ে প্রতিবাদ করতে করতে হয়রান হয়ে গেছিলাম। কোনোভাবেই তাদের ভাড়ার নৈরাজ্য থামাতে পারিনি। ই-টিকেটিং পদ্ধতিতে ভাড়া যেটা আসছে সেটা চার্টের ভাড়া। তাই এখন আর বাড়তি ভাড়া নিতে পারবে না। যত দ্রুত সব বাসে এই পদ্ধতি চালু হবে, তত দ্রুত রাজধানীবাসীর জন্য এটা ভালো হবে।’
রাজধানীতে বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য কোনো নতুন বিষয় নয়। সরকার ভাড়া ঠিক করে প্রতি কিলোমিটার হিসাবে। কিন্তু বাস কোম্পানিগুলো কিলোমিটার হিসাব করে নয়, একটি নির্ধারিত গন্তব্য পরপর ওয়েবিলের চেক হিসেবে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দেড় গুণ, দ্বিগুণ আদায় চলছে।
ডিজেলের দর লিটারে ৫ টাকা কমার কারণে যাত্রীদের এক পয়সা লাভ না হলেও বাস মালিকদের পকেটে বাড়তি কিছু পয়সা ঢুকছে।
প্রতিবার ভাড়া যখন পুনর্নির্ধারণ করা হয়, তারপর প্রতিবার সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করে সঠিক ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে পারেনি।
বাস মালিকরা একাধিকবার ঢাকায় ওয়েবিল বাতিল করে কিলোমিটার অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের অঙ্গীকার করে রাখেনি।
এর মধ্যে পরিবহন মালিকরা এই ই-টিকেটের বিষয়টি সামনে নিয়ে এলো।
ই-টিকেটিংয়ে তাৎক্ষণিক টিকিট বিক্রি করছেন এজেন্টরা। ছবি: নিউজবাংলা
বদনাম এড়াতে ই-টিকেটিং
ই-টিকেটিংয়ের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাইলটিং হিসেবে আমরা আজকে চারটা রুটে উদ্বোধন করেছি। আমরা আজকে সবাই রাস্তায় আছি। ই-টিকেটিং বাস্তবায়নের জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমাদের বিরাট একটা বদনাম আছে যে, আমরা নাকি ভাড়া ডাকাতি করি, ভাড়ার নৈরাজ্য করি। আমরা চাচ্ছি যাতে এটা কেউ না বলতে পারে, এ কারণেই এটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। এই পদ্ধতিতে ভাড়ার চার্ট অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হচ্ছে।’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর উদ্যোগে ভাড়ার নৈরাজ্যের অপবাদ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে ই-টিকেটিং পদ্ধতি শুরু হয়েছে বলে জানান মাহাবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘স্টেশনে আমাদের লোক থাকে তাদের থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বাসে উঠতে হবে। স্টেশনের বাইরে থেকে যাত্রী তোলা নিষেধ।’
অবশ্য প্রথম দিন নির্ধারিত স্টপেজের বাইরেও লোক তুলতে দেখা গেছে এবং তাদের কাছ থেকে টিকিট ছাড়াই ভাড়া আদায় করা হয়েছে, যার কোনো হিসাব আসলে মালিক পাবেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই বাস মালিক বলেন, ‘প্রথম দিন তো, এতদিনের তাদের অভ্যাস ঠিক হতে একটু সময় লাগবে।’