ডেস্ক নিউজ
ঈদ উপলক্ষে বিপণি-বিতানগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাহারি পোশাক ও জুতাসহ নানা পণ্যের সমাহার নিয়ে উদ্যোক্তারা হাজির হয়েছেন বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে। দুই বছর পর করোনা স্বাভাবিক হওয়ায় এবার বিক্রি বেড়েছে ই-কমার্সে। রমজান ও ঈদের কারণে অনলাইনে পণ্যের অর্ডার ও ডেলিভারি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।
করোনাকালে কেনাকাটার প্রধান মাধ্যম ছিল ই-কমার্স। ২০২০ সালে ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখেছে এ খাত। তবে সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও গত বছর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে গোটা খাতটি আস্থার সংকটে পড়ে।
জানা গেছে, প্রতারিত গ্রাহকদের অভিযোগে এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ১৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিরুদ্ধে ৪১টি মামলা করেছেন গ্রাহকরা। এসব মামলায় আসামি হয়েছেন ১১০ জন আর গ্রেফতার হয়েছেন ৩৬ জনেরও বেশি।
গত বছরের শেষে গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে কাজ শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-কমার্স খাতসংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে গ্রাহকদের অর্থ ফেরৎ প্রদান, ই-কমার্স ব্যবসার জন্য নিবন্ধনসহ বেশ কিছু উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। তবে কিছু মামলার মধ্যে অর্থপাচারের অভিযোগও রয়েছে। মামলা থাকার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকে থাকা গ্রাহকের অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপ ও করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় ফের মানুষ ই-কমার্সমুখী হয়েছে। অর্ডারও বেড়েছে চার-পাচঁগুণ।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে (ইক্যাব) দেশে ওয়েবভিত্তিক অনলাইন শপ প্রায় পনেরশ’র মতো। ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স বা এফ-কমার্স আছে ১০ হাজারেরও বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে এ খাতে। প্রতি মাসেই দুই থেকে আড়াই লাখ অর্ডার থাকছে। আগামী বছরের মধ্যে দেশের ই-কমার্স খাত ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপর পৌঁছাবে।
ব্যাংকার মেহেদি হাসান জাগো নিউজকে জানান, তিন হাজার টাকা ছাড়ে একটি স্মার্ট ফোন কিনেছেন একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে।
তিনি বলেন, মোবাইলটা কেনার জন্য ঈদের অফারের অপেক্ষায় ছিলাম।
মেহেদি হাসানের মতো অনেকেই অনলাইনেই করছেন ঈদের কেনাকাটা। কারণ সেখান থেকে পণ্য কিনে ক্রেতা পাচ্ছেন বিশেষ মূল্যছাড়। এর সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পরিশোধে রয়েছে ক্যাশব্যাক অফার। এছাড়া একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি, ফ্রি ডেলিভারির সুযোগ থাকছে। যানজটের ঝক্কি এড়িয়ে অনেকেই তাই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন অনলাইনে।
ঈদ কেনাকাটা নিয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফেসবুক গ্রুপ উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা জাগো নিউজকে বলেন, গতবার বা তার আগের বছর ঈদ সীমিত আকারে উদযাপিত হয়েছে। করোনার প্রথম বছর ই-কমার্স সেক্টর সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখেছে। পরের বছর কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে সেটা হোঁচট খেয়েছে। কিন্তু বাকি সব সেক্টর থেমে থাকলেও ই-কমার্স থেমে থাকেনি।
তিনি বলেন, এবার আমাদের মনে হচ্ছে গত দুবারের তুলনায় বেচাকেনা ভালোই হবে। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করছে। রোজার আগে প্রতিদিন ২ লাখ ৭০ হাজার অর্ডার ছিল। রোজার ভেতর সেটা সাড়ে তিন লাখ হয়েছে। ঈদের আগে অর্ডার ডেলিভারি আরও বাড়বে বলে মনে করছি। আমরা ধরে নিচ্ছি সেটা পৌনে চার লাখ ছাড়াবে।
নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, ক্যাশ অন ডেলিভারির পাশাপাশি কার্ডেও গ্রাহকরা টাকা পরিশোধ করছেন। তবে ক্যাশ অন ডেলিভারির সংখ্যাটা বেশি। বিতর্কিত কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে ই-কমার্সে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল সেটা থেকে মানুষ বের হয়েছে। এ কারণে ই-কমার্সে ঈদ কেনাকাটা বেড়েছে।
জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম অথবা ডট কমের হেড অব বিজনেস নুর মোহাম্মদ রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, বিগত দুই বছরে অনলাইনে ভালো কেনাকাটা হয়েছে। এ বছর আরও ভালো কেনাকাটা হচ্ছে, কারণ আমাদের করোনা পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ফ্যাশন আইটেম খুব ভালো চলছে। স্মার্টফোন বিক্রির রেসপন্সও ভালো। অথবা ডটকম থেকে কেনাকাটায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট থাকছে। একটা কিনলে একটা ফ্রি, ফ্রি ডেলিভারি, ইএমআইসহ নানান সুযোগ-সুবিধা থাকছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দুর্বার ডট লাইভের হেড অব বিজনেস এস এম তাহসিন রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বৈশাখে আমাদের ভালো বিক্রি হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মানুষ ই-কমার্সে ঢুকছে, পণ্য দেখছে কেনাকাটা করছে। গত দুই বছরের তুলনায় এবারের বিক্রি বেশি।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের ফ্যাশন আইটেম, গ্যাজেট আইটেম বেশি বিক্রি হচ্ছে। পণ্য ঢাকার মধ্যে তিনদিনে আর ঢাকার বাইরে সাতদিনের মধ্যে ডেলিভারির চেষ্টা করছি।