ডেস্ক নিউজ
- আকার দাঁড়াচ্ছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা
- অগ্রাধিকার পাচ্ছে দেশীয় শিল্প, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ
মহামারী কোভিডের ধাক্কা সামলে উঠেছে দেশ। এবার ফিরে যাবার পালা উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়। সে লক্ষ্যেই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামীকাল বৃহস্পতিবার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে আসছেন আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য। সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দা মোকাবেলা করে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে বাজেটে দেশীয় শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষি খাত যান্ত্রিকীকরণ, কর্মসংস্থান ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ সঙ্কটজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা প্রাধান্য পাচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেটের শিরোনাম করেছেন, ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন।’ মহামারী কোভিডের-১৯ এর আগে বাংলাদেশ পৌঁছে গিয়েছিল উন্নয়নের মহাসড়কে। সেই সড়ক ধরে বেশ জোরেশোরেই এগুচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারী এসে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিকেও শ্লথ করে দেয়। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। ফলে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ খুব একটা ব্যাহত হয়নি। যে কারণে বাংলাদেশের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, বাজেট প্রণয়নের কাজ শেষ। এখন অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতা ছাপার কাজ চলছে। এবারও অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেট উপস্থাপন করবেন। সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, গত দুই বছরের বাজেট ছিল মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবেলা। কোভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশে প্রায় ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে এসেছে। ফলে মহামারী পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে দেশে। কোভিড পরবর্তী এখন সরকার আবার উন্নয়নের দিকে নজর দিতে যাচ্ছে। উন্নয়ন শুধু অবকাঠামোতেই নয়, শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক সব ধরনের উন্নয়নের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে। তারই প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে এবারের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে।
আসছে বাজেটে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও বেশি খাদ্য উৎপাদনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। করণ কোভিডের সময় এই কৃষি উৎপাদনই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। এ কারণে কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা বাড়ানো, কৃষি পুনর্বাসন ও সারে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার প্রস্তাবনা থাকছে। এছাড়াও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করতে পল্লী উন্নয়নের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতায় বাড়ানোর প্রস্তাবনা থাকছে।
বাজেট প্রণেতারা জানান, দক্ষ জনবল তৈরির জন্য এবারের বাজেটে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বরাবরের মতোই সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় সম্প্রসারণ করে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে বিনামূল্যে ও স্বল্প মূল্যে খাদ্য বিতরণের আওতা বাড়ানোর প্রস্তাবনা রাখা হচ্ছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে।
সবমিলিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনকেই এবার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে মাথায় রাখতে হচ্ছে মহামারী ও বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিও। বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও সারের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের ভর্তুকিও বাড়ছে। ভর্তুকির টাকা যোগাতে এবার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে। বিশেষ করে আমদানির চাপের মধ্যে পড়েছে অর্থনীতি। যে কারণে মুদ্রা বাজারে মার্কিন ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে ডলারের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ অন্যান্য পণ্যের দামও অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এই বাজেট পেশ করবেন। এটি হবে অর্থমন্ত্রীর টানা চতুর্থ এবং বাংলাদেশ সরকারের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। দেশে সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য কিছুটা বাড়িয়ে ৫.৬ শতাংশ করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করেছে। এর মধ্যে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে আগামী বাজেটে সার্বিক ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সে হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ জিডিপি অনুপাতে কিছুটা কমলেও টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাড়ছে ৩০ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। কেননা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
এই ঘাটতি পূরণে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে নেয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ হাজার কোটি টাকা এবং এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে ব্যাংকবহির্ভূত খাত ও সঞ্চয়পত্র উভয় দিক থেকেই তিন হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে নতুন বাজেটের খসড়ায়।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট থেকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার দাঁড়াচ্ছে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি।
আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় অনুমোদন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। যা সংশোধন করে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
উন্নয়ন বাজেটের একটি অংশ এখনও বিদেশী উৎস থেকে সংগ্রহ করে সরকার। করোনা মোকাবেলায় এবারও বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ নজর দিচ্ছে সরকার। স্বাস্থ্যে বেশির ভাগ বড় প্রকল্প বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফলে চলমান প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখা ও করোনা প্রতিরোধসহ অন্য প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়নে নতুন অর্থবছরের বাজেটে বেশি বিদেশী ঋণ প্রাপ্তির প্রত্যাশা করছে সরকার।
আগামী বাজেটে বিদেশী ঋণের লক্ষ্য ৮৯ হাজার কোটি টাকা ধরা হবে বলে আভাস দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এটা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে বিদেশী ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরের মোট আয়ের তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে এনবিআরকে। এটি জিডিপির প্রায় ৮.৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছর এনবিআরকে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া আছে। সেই হিসাবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্য থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বা ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি আয় করতে হবে এনবিআরকে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে ভ্যাট বাবদ। এছাড়া আয়কর বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ও আমদানি শুল্ক বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। এছাড়া আগামী বাজেটে মোট আয়ের মধ্যে নন-এনবিআর থেকে প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত রাজস্ব ৪৯ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে এত বেশি শুল্ক-কর আদায়ে এনবিআরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মূলত বাজেটের অঙ্ক মেলানোর জন্য এনবিআরকে এই বিশাল লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই। কারণ চলতি অর্থবছরেই এনবিআরের শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। তার ওপর নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের এই বোঝা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতটা বহন করতে পারবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বাজেট পেশের আগেই। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ভ্যাট থেকে সরকার বেশি আয় আশা করে। কিন্তু এখনও ভ্যাট অটোমেশনে যাওয়া যায়নি। ভ্যাট অটোমেশনে না গেলে রাজস্ব আদায় বাড়ানো কঠিন হবে।’ সে হিসাবে নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী অটোমেশনের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে রাজস্ব আদায়ের বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ধনাঢ্যদের ওপর করের বোঝা বাড়তে পারে। যাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ১ কোটি বা তার চেয়েও বেশি টাকা আছে, তাদের ওপর আরও উচ্চ মাত্রায় আবগারি শুল্কারোপের পরিকল্পনা করছে সরকার। এক্ষেত্রে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডেবিট বা ক্রেডিট আকারে ১-৫ কোটি টাকার স্থিতি আছে, এরকম এ্যাকাউন্টের মালিকদের কাছ থেকে ব্যাংক বছরের যে কোন সময় ১৮ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক কেটে নেবে। বর্তমান বাজেটে এ ধরনের স্থিতির জন্য আবগারি শুল্কের পরিমাণ ধরা আছে ১৫ হাজার টাকা।
গত বছরের শেষ নাগাদ ডেবিট বা ক্রেডিট আকারে ১-৫ কোটি টাকার মধ্যে স্থিতি আছে এরকম ব্যাংক এ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫১। আগামী অর্থবছরে ৫ কোটির চেয়ে বেশি স্থিতি আছে, এরকম এ্যাকাউন্টের আবগারি শুল্ক ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৪৫ হাজার টাকা হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আবগারি শুল্কে কোন পরিবর্তন আসবে না।
ধনীদের ওপর আবগারি শুল্কারোপের এই ব্যবস্থাটি রাজস্ব আদায়ে বেশ ভাল ফল দিয়েছে। বর্তমানে ৩-৫ লাখ টাকা স্থিতির জন্য আবগারি শুল্কের পরিমাণ ১৫০ টাকা। আর ৫-১০ লাখ টাকার মধ্যে স্থিতির জন্য আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা এবং ১০ লাখের চেয়ে বেশি কিন্তু ১ কোটির চেয়ে কম স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক হিসেবে ৩ হাজার টাকা কেটে নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আবগারি শুল্কের সবচেয়ে বড় উৎসে পরিণত হয়েছে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট এবং চলমান অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আদায়ের দিক দিয়ে এই খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
বাংলাদেশে কর্পোরেট কর হার দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের চেয়ে বেশি। তাই আগামী অর্থবছরেও কর্পোরেট কর হারে ছাড় দেয়া হতে পারে। লক্ষ্য হচ্ছে, ধীরে ধীরে কর্পোরেট করের হার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। এতে কর্পোরেট খাত বিকশিত হবে এবং দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
এই অবস্থায় আগামী অর্থবছরে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে কর্পোরেট করের হার ২০ শতাংশে নেমে আসবে। তবে ব্যাংক ও মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে কর্পোরেট করের হার অপরিবর্তিত থাকবে। সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে। আর তালিকাভুক্ত নয়, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কর্পোরেট করের হার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
আমদানি ব্যয় কমানোর জন্য ইতোমধ্যে প্রসাধনী, ফুল, ফল ও আসবাবপত্রসহ ১৩৫ ধরনের পণ্য আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব বিলাসবহুল পণ্যের ওপর কর আরও বাড়তে পারে। এতে গাড়ি, ফ্রিজ ও এসির মতো পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে। ফলে আমদানির ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা প্রশমিত হবে এবং বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা দূর হবে।
সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগ দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে। স্থানীয় হোম এ্যাপ্লায়েন্স নির্মাতাদের তাদের পণ্যের গুণগত মান আরও উন্নত করতে উৎসাহিত করবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে এসব পণ্য আর দেশে আমদানির প্রয়োজন হবে না। এ লক্ষ্যে সরকার উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকা তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত, উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্পোরেট করের হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে আনবে।