ডেস্ক নিউজ
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেরিতে শুরু হলেও ৩১ দিন পেরিয়ে পর্দা নামল একুশের বইমেলার।
বৃহস্পতিবার মেলার শেষ দিনে আয়োজক বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হল, এবার কমপক্ষে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে।
সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সমাপনী অনুষ্ঠানে বইমেলার সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ তার প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেন।
তবে সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের ধারণা, বই বিক্রি শত কোটি টাকার বেশিই হবে, প্রকাশকরা ঠিক তথ্য দেননি।
২০২১ সালে মহামারীতে টালমাটাল অবস্থায় বইমেলায় সর্বমোট বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ টাকার বই। তবে ২০২০ সালে এই অঙ্ক ছিল ৮২ কোটি টাকা।
জালাল বলেন, এবার বইমেলায় বাংলা একাডেমি ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। মেলায় সর্বমোট বই বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার।
“বাংলা একাডেমি মেলার শেষ দিকে এসে একটা জরিপ পরিচালনা করে থাকে। সেই জরিপের ভিত্তিতে সর্বমোট বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়। এই সংখ্যাটা নিশ্চিত না হলেও মোটামুটি একটি অঙ্ক আমরা দাঁড় করাতে পারি। তবে বিক্রির অঙ্কটা এর চেয়ে কম নয়, বেশিই হবে।”
বিক্রি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যদিও ৫২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলা হচ্ছে, কিন্তু আমার ধারণা শত কোটি টাকার মতো বই বিক্রি হতে পারে। বেশি বললে হয়ত আয়কর বিভাগ এসে ধরে কি না, সে ভয়ে তারা (প্রকাশকরা) কমিয়ে বলছেন।”
একুশের বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
নতুন বইয়ের তথ্য তুলে ধরে জালাল বলেন, বইমেলায় এবার ৩ হাজার ৪১৬টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৯০৯টি বাংলা একাডেমির বিবেচনায় ‘মানসম্মত’।
“আমরা প্রতি বছর বাংলা একাডেমি থেকে একটি কমিটির মাধ্যমে কতটি বই মানসম্মত হয়, সেটি নির্ধারণ করে থাকি। ২০২০ সালে ৪ হাজার ৯১৯টি বই প্রকাশিত হয়েছিল। ওই বছর মানসম্মত বই ছিল ৭৫১টি, শতকরা ১৫ শতাংশ ছিল মানসম্মত। এবার মোট প্রকাশিত বইয়ের ২৬ শতাংশ মানসম্মত। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ২০২০ সালের তুলনায় এবার ভালো মানসম্মত বই প্রকাশিত হয়েছে।”
বরাবর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন একুশের বইমেলা শুরু হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেশি থাকায় তা পিছিয়ে যায়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বইমেলার ৩৮তম আসরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তখন সিদ্ধান্ত ছিল, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এবারের মেলা। পরে সংক্রমণের হার কমে আসায় ১৭ মার্চ পর্যন্ত বইমেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে পছন্দের বইয়ের খোঁজে তরুণরা। ফইল ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
সমাপনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, “অমর একুশে বইমেলার প্রায় চার দশকের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী বইমেলা।
“করোনায় গত বছর বইমেলায় প্রকাশকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমরা আশঙ্কার মধ্যে ছিলাম যে, আবার বইমেলা করে প্রকাশকদের ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিই কি না।কিন্তু আমাদের ভাগ্য ভালো মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে সংক্রমণের হার কমে এসেছে। নানা আশা-আকাঙ্ক্ষা, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এবারের বইমেলার সফল সমাপ্তি হয়েছে।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন বলেন, “বইমেলা জাতির প্রাণকে আলোকিত করে, বাঙালির ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে তুলে ধরে এবং প্রজন্মকে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। বাঙালির জীবনের এক অসাধারণ দিক এই বইমেলা।
“আমি অনেক জায়গায় বইমেলায় গিয়েছি। সব জায়গায় গিয়ে আমার মনে হয়েছে, বইয়ের কোনো সীমান্ত নেই, বই সীমান্ত অতিক্রম করে সব জায়গায় পৌঁছে যায়। আমরা বইমেলার সবটুকু ধারণ করে বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি সত্তার অগ্রমানতা রক্ষা করব।”
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসিম কুমার দে।
পাখির চোখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা। ফাইল ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার
এবারের বইমেলায় অংশ নেওয়া নেওয়া আট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে বাংলা একাডেমি কর্তৃক চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।
২০২১ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য ‘আগামী প্রকাশনী’কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২২ দেওয়া হয়।
২০২১ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত সম্পাদিত বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ স্মারক প্রকাশের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, জালাল ফিরোজ রচিত লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর একদিন গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুক্স এবং সৈয়দ আবুল মকসুদ রচিত নবাব সলিমুল্লাহ ও তার সময় গ্রন্থের জন্য ‘প্রথমা প্রকাশন’কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।
অন্যদিকে ২০২১ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্যে গুণমান বিচারে সর্বাধিক বই প্রকাশের জন্য ‘কথাপ্রকাশ’কে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।
এছাড়া এ বছরের বইমেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নবান্ন প্রকাশনী, নিমফিয়া পাবলিকেশন ও ‘পাঠক সমাবেশ’কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত সব প্রকাশককে ৫০ হাজার টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়।