ডেস্ক নিউজ
আজ বুধবার জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার, লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে শেখ হাসিনার সরকার।’ গত ১২ বছরে সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত ৬ লাখ ৭ হাজার ৮৮০ জনকে সরকারী আইনী সেবা প্রদান করা হয়েছে। ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬৮ জনকে সরকারী খরচে মামলা দায়ের ও আইনজীবী নিয়োগসহ সকল ব্যয় নির্বাহ করতে সহায়তা করেছে। সহায়তাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের মধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪১১ জন নারী ও ১ লাখ ৪২ হাজার ৪১৫ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ১৪২ জন শিশু। এ ছাড়া ২০১২ সাল থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত ৯ বছরে কারাগারে আটকে থাকা ৮৫,৭৫১ জন অসহায় কারাবন্দীকে সরকারী আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আইনমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদান করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করেন এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে সরকারী আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর এ আইনের বাস্তবায়ন কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে যায়। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠন করলে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রম সক্রিয়করণের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০১৪ সালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে জনাব আনিসুল হক এমপি দায়িত্ব গ্রহণের পরেই সরকারী আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে আরও জনবান্ধব ও সম্প্রসারিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তার দিকনির্দেশনায় সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস, চৌকি আদালত বিশেষ কমিটি, শ্রম আদালত বিশেষ কমিটি, উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন ও সক্রিয়করণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোতে একজন করে সিনিয়র সহকারী জজ/সহকারী জজ পদমর্যাদার বিচারককে লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে ‘এডিআর কর্নার’ বা ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৬ সালে মন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকারী আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে ডিজিটাইজেশন করা হয়। এ ব্যবস্থাপনার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় জাতীয় হেল্পলাইন কলসেন্টার ১৬৪৩০। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় লিগ্যাল এইড সেবা নিশ্চিত করার উদ্দেশে চালু করা হয় লিগ্যাল এইড অনলাইন কার্যক্রম।
তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের জনকল্যাণমূলক আইনী সেবার বার্তা পৌঁছে দেয়া ও সরকারী আইনী সেবার বিষয়ে অধিকতর জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৩ সালের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৮ এপ্রিলকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং তখন প্রতি বছর দেশব্যাপী র্যালি, লিগ্যাল এইড মেলা, রক্তদান কর্মসূচী, পথনাট্ক, সভা-সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালন করা হয়। করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯’র প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর সীমিত পরিসরে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এবং আইন ও বিচার বিভাগের মাননীয় সচিব বাণী দিয়েছেন। দরিদ্র, অসহায় ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষকে আইনী সহায়তা প্রদানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে আগামীকাল জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে এবং দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরতে দেশের বিভিন্ন জেলায় সীমিত পরিসরে স্ব স্ব কর্মসূচী পালিত হবে।
আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রম ॥ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত সংস্থাটি সর্বমোট ৬,০৭,৮৮০ (ছয় লক্ষ সাত হাজার আট শ’ আশি) জনকে সরকারী আইনী সেবা প্রদান করেছে; যার মধ্যে ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে ২,৮৯,৯৬৮ জনকে সরকারী খরচে মামলা দায়ের ও আইনজীবী নিয়োগসহ প্রাসঙ্গিক সকল ব্যয় নির্বাহ করতে সহায়তা করেছে। সহায়তাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের মধ্যে ১,৪৬,৪১১ জন নারী ও ১,৪২,৪১৫ জন পুরুষ এবং ১১৪২ জন শিশু।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যক্রম ॥ সংস্থাটি জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ হতে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত সর্বমোট প্রাপ্ত ৪৭,১২৮টি বিরোধ/মোকদ্দমার (প্রি- কেইস+পোস্ট কেইস) মধ্যে ৪১,০০২টি বিরোধ/মোকদ্দমা বিকল্প পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করে উপকারভোগীদের ৫৭,০৯,১৫,২৬৮/- (সাতান্ন কোটি নয় লাখ পনেরো হাজার দুই শ’ আটষট্টি) টাকা আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ১৩৩৪টি মোকদ্দমা বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
লিগ্যাল এইড মামলা নিষ্পত্তি ॥ ২০০৯ থেকে মাচ ২০২১ পর্যন্ত পারিবারিক, দেওয়ানি, ফৌজদারিসহ সর্বমোট ১,৩৭,৬৫৪ (এক লাখ সাঁইত্রিশ হাজার ছয় শ’ চুয়ান্ন) টি লিগ্যাল এইডের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তিকৃত মামলাসমূহের মধ্যে দেওয়ানি ১৮,৬৭২টি, ফৌজদারি ৮৯,৩৯৯টি, পারিবারিক ২৮,৬৮৭টি এবং অন্যান্য ৮৯৬টি। তাছাড়া ২০০৯ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত সুপ্রীমকোর্টে ২০৪৬টি মামলায় সরকারী খরচে আইনী সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং ১৯,৭৩৭ জনকে আইনী পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল ॥ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংস্থা ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার শ্রম আদালতে ও ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল স্থাপন করেছে। এ দু’টি সেলের মাধ্যমে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত ১৪,৯৫৫ জনকে আইনী পরামর্শ প্রদান, ৩৩৭০টি মামলা দায়ের, ৩০০টি মামলা নিষ্পত্তি, ২৫৮ জনকে চাকরিতে পুনর্বহাল এবং ৭১টি সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ১১৭৭টি বিরোধ বিকল্প পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪,৭৮,৯৯,২৩৭/- (চার কোটি আটাত্তর লাখ নিরানব্বই হাজার দুই শ’ সাঁইত্রিশ) টাকা আদায় করা হয়েছে।
কারাবন্দীদের আইনগত সহায়তা ॥ জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ২০১২ সাল থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত কারাগারে আটকে থাকা ৮৫,৭৫১ জন অসহায় কারাবন্দীকে সরকারী আইনগত সহায়তা প্রদান করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকালে আইনী সেবা কার্যক্রমঃ করোনাভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবকালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক, এমপির নির্দেশনায় আইন ও বিচার বিভাগের অধীন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সাধারণ মানুষের জন্য আইনগত পরামর্শ কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে।