ডেস্ক নিউজ
অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজপোর্টালগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নীলু ও জারিন রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। পরে রাশিদা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত ১৬ আগস্ট রুলসহ আদেশ দিয়েছিলেন। সে রিটেই সম্পূরক আবেদন করে অনিবন্ধিত, অননুমোদিত নিউজপোর্টাল বন্ধের আরজি জানিয়েছিলাম। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত ওই নির্দেশ দেন।’
সংবেদনশীল সংবাদসহ যে কোনো খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য ‘নৈতিক নীতিমালা’ প্রণয়ন চেয়ে গত ৫ মে সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে রিট করেন আইনজীবী জারিন রহমান ও রাশিদা চৌধুরী নীলু। রিটে বলা হয়, সম্প্রতি রাজধানীতে ২১ বছরের এক মেয়ের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়। এ ঘটনা ঘিরে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে, বিশেষ করে
বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টালে অগ্রহণযোগ্যভাবে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। এ অবস্থায় সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি হয়ে উঠেছে।
ঢাকা ও রংপুরে ১৮ পত্রিকা বন্ধ ঘোষণা : দৈনিক ও সাপ্তাহিক ১৮টি পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ঢাকায় ১০টি দৈনিক এবং রংপুরে চারটি দৈনিক ও চারটি সাপ্তাহিক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশনা না থাকায় এগুলোর ঘোষণাপত্র বাতিল করা হয়। ঢাকায় বাতিল হওয়া পত্রিকাগুলো হলোÑ গণ আওয়াজ, দৈনিক জনসেবা, ঢাকা প্রকাশ, জাতির কণ্ঠ, কিষাণ, এই দেশ এই দিন, পূর্ব আলো, সময়ের পাতা, রিপোর্টার এবং দ্য ফাইন্যান্সিয়াল ডেইলি। রংপুরের পত্রিকাগুলো হলোÑ গণ আলো, নতুন স্বপ্ন, বাহের সংবাদ, রংপুর চিত্র, সাপ্তাহিক উত্তরের হালচাল, সাপ্তাহিক তুফান, সাপ্তাহিক কাউনিয়া ও সাপ্তাহিক সমর্থন। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশনা না থাকায় আইনানুযায়ী এসব পত্রিকার ঘোষণাপত্র বাতিল করে প্রকাশনা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে জিততে হলে
আন্দোলনে জিততে হবে
বিএনপির
সিরিজ বৈঠকের প্রথম দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক ষ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর তারেক রহমান কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বড় পরিসরে এই প্রথম বৈঠক করলেন। ফলে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক। সিরিজ বৈঠকের প্রথম দিন গতকাল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের কাছ থেকে মতামত নেন তারেক রহমান। বৈঠকে নেতারা বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে সরাতে হবে। শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। নির্বাচনে জিততে হলে নির্বাচনের আগেই জিততে হবে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে নেতারা আরও বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন না ঘটালে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মতো ‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করবে। বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপির মাধ্যমে সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। গতকালের বৈঠকটির বিশেষ দিক হচ্ছেÑ দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এই প্রথম বড় আকারের কোনো সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত
হলো। নেতাদের বক্তব্য শুনে তারেক রহমান দিকনির্দেশনামূলক কথা বলেন। করোনাকালে হেল্প সেল গঠনের প্রশংসা করেন তিনি।
দলের কয়েকজন নেতা বলেন, বৈঠকে বেশিরভাগ নেতাই আন্দোলনের পক্ষে মত দেন। সংগঠনের বেহাল দশার কথাও উঠে আসে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া বোকামি। ৬ বারের এমপি হয়ে আমি নির্বাচনের সময় ঘর থেকে বের হতে পারিনি। ঘোষণা দিতে হবে, হাসিনার অধীনে ‘নো’ নির্বাচন। সংসদ বহাল রেখেও নির্বাচন হবে না। তিনি আরও বলেন, জোট ঠিক আছে। কিন্তু নির্বাচনী জোটের নেতৃত্বে বিএনপিকে থাকতে হবে। আমাদের কূটনীতিক দুর্বল। কেন নির্বাচনে যাব না তা বিদেশিদের বোঝাতে হবে।
আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেন, আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ। এক দফা এক দাবিÑ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাব না। যে নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান অংশ নেবেন না সে নির্বাচনে কেন যাব। আগে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন করতে হবে। আন্দোলনে জয়ী হওয়ার পর নির্বাচনে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে আবার নির্বাচন হলে জামায়াত ’৮৬ ও ’৯৬ সালের মতো বিএনপি ছাড়াই নির্বাচনে চলে যাবে। তাই জামায়াতের ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে নানা ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হবে।
ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীও বলেন, হাসিনার অধীনে নির্বাচনের যাওয়া যাবে না। আমাদের বহির্বিশ্বে বন্ধু ও শত্রু চিহ্নিত করতে হবে। বর্তমান সরকারকে পুলিশ, বিদেশি ও আমলাদের সরকার বলে দাবি করেন ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, জোটের দরকার নেই। আমরা রাজপথে দাঁড়াতে পারলে সবাই আমাদের সঙ্গে আসবে। যুগপৎ আন্দোলন করাটাই ভালো। হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার আগে রাজপথে আমাদের জিততে হবে। ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীরউত্তম বলেন, নির্বাচনে জিততে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর ভীতি সঞ্চার করতে হবে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে আগের নির্বাচনে যে সিট দিয়েছে এবার তা-ও দেবে না। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। তাই দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই। জোটের বিষয়ে কথা বলেন আরও চার উপদেষ্টা ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান। তারা বলেনÑ এখনই বাম-ডানসহ বিরোধী সব দলের সঙ্গে কথা বলা শুরু করা উচিত। আমাদের দাবি আর তাদের দাবি প্রায় একই। সবাইকে একমঞ্চে আনার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটের শরিকদেরও সক্রিয় করতে হবে।
নেতাদের কেউ কেউ দলের অঙ্গসংগঠনগুলো বিশেষ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলকে আন্দোলনমুখী নেতৃত্বে পুনর্গঠনের কথা বলেন।
সভার মূলমঞ্চে ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বরচন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিকাল ৪টায় বৈঠক শুরু হয়। আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহসম্পাদকরা থাকবেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ দিনে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বসবেন তারেক রহমান।
গতকাল বৈঠকে ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিলে ৬২ জন অংশ নেন। তাদের মধ্যে ২৮ জন বক্তব্য রাখেন। ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ছিলেন শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান, মীর নাছির উদ্দিন, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী ও শওকত মাহমুদ। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী, মশিউর রহমান, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান, লুৎফর রহমান খান আজাদ, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ফজলুর রহমান, শাহাজাদা মিয়া, সুকোমল বড়ুয়া, খন্দকার মুক্তাদির আহমেদ, এসএম ফজলুল হক, আবদুল হাই, ভিপি জয়নাল আবেদীন, গোলাম আকবর খন্দকার, শাহেদা রফিক, আফরোজা খানম রীতা, তাহসিনা রুশদীর লুনা, তাজমেরী এস ইসলাম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, এরামুজ্জামান, তৈমূর আলম খন্দকার, মইনুল ইসলাম শান্ত, মাহবুবুর রহমান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আবদুল হাই শিকদার, আতাউর রহমান ঢালী, বোরহান উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুস, নাজমুল হক নান্নু প্রমুখ।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বেশি কিছু এখন বলার নেই।