ডেস্ক নিউজ
রাজধানীতে কমছেনা সড়ক দুর্ঘটনা। প্রায় প্রতিদিন প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। নিয়ম-নীতি না মেনে বেপরোয়াভাবে বাস চালানোর কারণে ঘটছে এ দুর্ঘটনা। এজন্য চুক্তভিত্তিকি বাস চালানোকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পরিবহন নেতাদের দাবি চুক্তিভিত্তিক বাস চালানো বন্ধের চেয়ে সড়ক অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকেই বেশি জোর দিতে হবে।
রাজধানীর মতিঝিল, মিরপুর, শাহবাগ, মগবাজার, মালিবাগ, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, নির্ধারিত বাস স্টপেজের বাইরেই চালকরা বাস থামাচ্ছেন। একটি বাসের গা ঘেষে অন্যটি থামার কারণে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা বাসে উঠা-নামা করছেন। আর ফাঁকা রাস্তা পেলেই প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন চালকরা। বাসে থাকা যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেও চালকরা বেপরোয়া ভাবেই বাস চালান।
সায়দাবাদ আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালে কথা হয় রাইদা পরবিহনের বাসচালক মোবারক হোসনের সঙ্গে। তিনি জানান, এখনো তারা চুক্তিরভিত্তিতেই বাস চালান। কন্ডাক্টার ও হেলপারের বেতন, মালিকের জমা, রাস্তার খরচ বাদ দিয়ে নিজের টাকা উঠাতে হয়। তিনি আরো জানান, অন্য গাড়িকে পেছনে ফলতে না পারলে যাত্রী পাওয়া যায় না। আর যাত্রী না পেলে বাড়তি টাকাও আয় হবে না।
বাসস্টপে এসে থামার সময় আড়াআড়িভাবে একটি বাস অন্য বাসকে চাপ দিয়ে বেরিকেড দেয়। এ বিষয়টি দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলাকা পরবিহনের হেলপার (চালকের সহকারি) সুজন জানান, আশঙ্কা তো থাকেই। যাত্রী ও বাসস্টাফ, বিশেষ করে যারা গেটে দাঁড়িয়ে যান ও ডিউটি করেন, তাদের ঝুঁকি থাকে বেশি। কিন্তু আমাদের কিছু করার থাকে না। মালিকের নির্ধারিত টাকা উঠিয়ে দেয়ার পর আমাদের বেতন, খোরাকি ও রাস্তার চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে হয়। যে ভাবেই হোক, আমাদের টার্গেট পূরণ করতে হয়। তা না হলে দিনশেষে মালিকের গালাগাল শুনতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফার্মগেটে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, নতুন সড়ক আইনে এতো কঠোরতার পরও বাস চালকরা তোয়াক্কা করছেন না। তারা আগের মতোই বেপরোয়া। নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নের শুরুতে চালকরা কিছুটা নিয়ম মেনে চললেও এখন তারা অগের মতোই আচরণ করছেন। কেউ কেউ কোনো নিয়মই মানছেন না।
তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশে চালকদের ট্রাফিক সচেতনতা বিষয়ে মোটিভেশন করছি, তারপরও শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছি না। বাস চালকদের অধিকাংশই অশিক্ষিত। তাই তাদের বোঝানো বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
আজিমপুর থেকে মিরপুর রোডে চলাচলকারী বিকাশ পরবিহনের ব্যবস্থাপনা পরচিালক সোহরাব হোসেন জানান, পরিবহন খাতে অশিক্ষিত বাস স্টাফদের কারণে শৃঙ্খলা ফেরানো সহজে সম্ভব না। আমারাও বাস চালকদের অনেক বোঝাতে চেষ্টা করছি। আইন মেনে চলতে ও যাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে। কিন্তু তারা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেন।
তবে শুধু শিক্ষার অভাবই নয়, বাস স্টাফদের অতিরিক্ত পরিশ্রমও তাদের ধৈর্যচ্যুতির অন্যতম কারণ বলে মনে করনে তিনি। তার মতে একজন চালক সকাল থেকে শুরু করে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত বাস চালান। এরমধ্যে রাস্তায় তাকে নানান ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। তার উপর মালিকের বেঁধে দেয়া টার্গেট পূরণের টেনশনও থাকে চালকের মাথায়। এছাড়া পরবিহন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সব মিলিয়ে রাজধানীতে একজন বাস চালকের পক্ষে ট্রাফিক আইন পুরোপুরি মেনে চলা কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীতে চলাচলকারী বাস মালিকদের সংগঠন ‘ঢাকা সড়ক পরবিহন সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, তারা চুক্তিভিত্তিক বাস চালানো ৬০ শতাংশই বন্ধ করতে পেরেছেন। এখনো ৪০ শতাংশ বাস চুক্তিভিত্তিক চলাচল করছে। তারা এজন্য মালিকদের আপাতত চাপ দিচ্ছেন না। কারণ, দুর্ঘটনা রোধে বর্তমানে তারা সড়ক অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকেই বেশি জোর দিয়েছেন।