ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশে পর্যটকদের আগমন ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। বাংলাদেশ অফুরন্ত পর্যটন সম্ভাবনার দেশ। বিশ্বের যে কোন পর্যটককে আকৃষ্ট করার মতো সকল উপাদান রয়েছে এদেশে। বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বন্ধু-বাৎসল মানুষ ও তাদের অকৃত্রিম আতিথেয়তা, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি, দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, বন-বনানী, জীব-বৈচিত্র্য এবং বৈচিত্র্যময় আদিবাসী সংস্কৃতি যে কোন পর্যটকের নিকট অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান খাতসমূহের মধ্যে অন্যতম সেবাখাত। সেবাখাতের সর্ববৃহৎ অংশীদার পর্যটন শিল্প। কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে পর্যটন শিল্প। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে এ খাতের প্রত্যক্ষ অবদান ছিল ৪২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন টাকা যা জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ এবং সর্বমোট অবদান ছিল ৮৫০ দশমিক ৭ বিলিয়ন টাকা যা জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
দেশের অফুরন্ত পর্যটন আকর্ষণসমূহকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে সরকার কর্তৃক বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ১৯৭২ সালে গঠন করেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের পর্যটন উন্নয়নের অগ্রপথিক। সরকারী এ সংস্থাটি বেসরকারি অংশীজনসহ দেশের পর্যটন উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। বিশ্বব্যাপী পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদানের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের পর্যটন বিকাশ ও বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কর্তৃক ২০১০ সালে জাতীয় পর্যটন নীতিমালা ও বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড আইন-২০১০ প্রণয়নসহ জাতীয় পর্যটন সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির জন্মলগ্ন থেকে দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, বিকাশ ও বিপণনে সরকারী-বেসরকারী অংশীজনসহ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে লক্ষ্য ৮, ১২ ও ১৪ প্রত্যক্ষভাবে পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পর্যটন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তিগুলোর মধ্যে একটি। বর্তমানে প্রতি ১০টি কর্মসংস্থানের মধ্যে ১টি কর্মসংস্থান পর্যটন খাত কেন্দ্রিক। এক্ষেত্রে পর্যটন এলাকাগুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে সংস্কৃতি ও পণ্য প্রমোট করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও যুব ও মহিলাদের স্বাবলম্বী করা সম্ভব।
বিদেশী ও দেশী পর্যটকগণের স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উৎপাদন পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা এবং ভোক্তা পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। খাদ্য নিরাপত্তা পর্যটন আকর্ষণের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। রিভার ক্রুজ এবং নদীপথে ট্যুরিজম উন্নয়নের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ও দফতর বিআইডব্লিউটিসি এবং বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন অধিদফতর এ বিষয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন করতে পারে।