ডেস্ক নিউজ
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি ব্যয় রীতিমতো রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সেখানে অনন্য নজির স্থাপন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প।
বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ২১ জুন প্রকল্পের খরচের বিস্তারিত তুলে ধরে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প থেকে এনবিআরে চিঠি পাঠানো হয়।
ওই চিঠিতে বেঁচে যাওয়া ৩৪২ কোটি টাকা ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে (আইআরডি) অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৬৯০ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয় ৫৫১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১০১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ৪৪৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০১৪ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। পরে ওই বছরই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়।
এরপর ব্যয় ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ ও বাস্তবায়নকাল ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধিসহ প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি একনেক সভায় সেটি অনুমোদন হয়। দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৬৯০ কোটি ১৩ লাখ টাকা ধরা হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প সাহায্য ৪৪৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ধরা হয়। কিন্তু যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দুদফা সময় বাড়ানো হয়। জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়।
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য ছিল-নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন; এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যবসা পরিচালনা সুলভ ও সহজতর করা; কর প্রদান করে না এমন ব্যক্তিদের শনাক্ত করা ও এনবিআরের লেনদেনের সক্ষমতা বৃদ্ধি; আধুনিক, সুশৃঙ্খল ও সেবাভিত্তিক ভ্যাট প্রশাসন চালু করা; জ্ঞানভিত্তিক ভ্যাট প্রশাসন তৈরি; দেশে শিল্পায়নের দ্রুত প্রসারে সহায়তা করা; সরকারি ও বেসরকারি খাতে ব্যবসা শুরুর সময় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি ও ব্যবসা পরিচালনা; অধিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে বেসরকারি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ উৎসাহিত করা।
এ বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনলাইন প্রকল্পে সফটওয়্যার উন্নয়ন করাসহ যতো ফিচার ছিল, সবগুলোই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক তৃতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পের কার্যক্রম মূল্যায়ন করেছে। এরপরই তারা অর্থ ছাড় করেছে। পরামর্শক ফি ও ভবন সংস্কার খাতে অর্থ ব্যয় না হওয়ায় বিপুল অঙ্কের অর্থ বেঁচে গেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্প শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন ফিচার যুক্ত করার জন্য জনবল প্রয়োজন। এই মুহূর্তে এটি খুবই দরকার। যেমন বাজেটে ভ্যাটে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে অনুযায়ী সফটওয়্যার পুনর্গঠন করা দরকার। কিন্তু বর্তমানে যে জনবল আছে, তা দিয়ে এ কাজ করতে গেলে বছরের অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়ে যাবে। এখন ভেন্ডরদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। পাশাপাশি নিজস্ব লোকবল দক্ষ করে তুলতে শিগগিরই একটি টিম ভিয়েতনামে পাঠানো হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে একটি কল সেন্টার (১৬৪৪৪) করা হয়েছিল। এখন সেটি বন্ধ আছে। আগামী মাস থেকে এটি পুনরায় চালু করা হবে। এ কল সেন্টারে ভ্যাট সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পাবেন ব্যবসায়ীরা।
এখন ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের অনলাইনে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, রিটার্ন, পেমেন্ট, রিফান্ড, উপকরণ-উৎপাদন সহগ ঘোষণা, ডকুমেন্ট প্রসেসিং, মামলা নিষ্পত্তি ও রিটার্ন ভেরিফিকেশনের কাজ করা হচ্ছে।