এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নের ফল ঘোষণার পর শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিষয়ক আলোচনা। কিন্তু অটোপাসের মাধ্যমে এবার বহুসংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পাওয়ায় অনেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। দেড় লাখ জিপিএ ৫ ধারী শিক্ষার্থী এবার বঞ্চিত হবেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া থেকে। অন্যদিকে সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় মিলেও পর্যাপ্ত আসন না থাকায় ২ লাখ শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবেন উচ্চ শিক্ষা থেকে।
এইচএসসি ও সমমান উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইউজিসির ওয়েব সাইটে উল্লেখ করা আছে, দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৪৬টি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে আসন আছে মাত্র ৪৭ হাজার। তবে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। জিপিএ ৫ না পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পাবেন। ফলে আরো বেশ কিছু জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সুযোগ হারাবেন। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় দেড় লাখ জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সুযোগ হারাবেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির।
শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অসংখ্য শিক্ষার্থী এবার বেসরকারি বা জাতীয় কোনো ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হতে পারবেন না আসনের অভাবে। প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবেন উচ্চ শিক্ষা থেকে।
শনিবারের প্রকাশিত ফল থেকে জানা গেছে, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে এবার মোট পাস করেছেন ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য বলছে, উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হওয়ার মতো আসন আছে সাড়ে ১১ লাখের মতো। এর ফলে পাস করা সব শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ নেই।
এদিকে শনিবার ফল প্রকাশের পর এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কোন্ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে, সে বিষয়ে প্রাথমিক কিছু সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছে তারা। তবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তাড়াহুড়ো চান না উপাচার্যদের কেউ কেউ। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত শিক্ষাবর্ষে যাঁরা ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস হয়নি বললেই চলে। তাঁদের পরীক্ষাও হয়নি। এ অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে নতুন করে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা সমীচীন হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, মার্চের আগে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা বসে পরীক্ষার তারিখ ঠিক করবেন।
এবার বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে বলে আগেই জানিয়েছে। এর মধ্যে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবার প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষাবিষয়ক কার্যক্রমের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁরা ৪ ফেব্রুয়ারি প্রস্তুতিমূলক সভা ডেকেছেন। তবে পরীক্ষার তারিখ ঠিক হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায়। যদিও তাঁর প্রাথমিক ধারণা হলো, মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। তিনি মনে করেন, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আর করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলেই এই পরীক্ষা নিতে হবে।
সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে। তবে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয় নি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয় এমন কলেজ আছে ৮৬৭টি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ দেশের এক শীর্ষ গণমাধ্যমকে বলেন, মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে তাঁরা ভর্তির কাজটি শেষ করতে চান। আর তাঁদের সমস্যা হবে না। কারণ, তাঁরা প্রচলিত নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করবেন। এ জন্য খোলার জন্য তাঁরা বসে থাকবেন না।
চারটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আলোচনা করলেও এখনো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।