নিউজ ডেস্ক:
একের পর এক রহস্যের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হঠাৎ করেই তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করে মির্জা ফখরুলের সরাসরি নির্দেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ‘বয়স্ক’ ১২ বিদ্রোহী নেতাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির ১২ জন ‘বিদ্রোহী’ নেতাকে শনিবার (২২ জুন) দিবাগত রাতে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত এই ‘বয়স্ক’ নেতারা বয়সসীমা নির্ধারণ না করে ধারাবাহিক ছাত্রদলের কমিটি গঠনের দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন।
সূত্র বলছে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিবাদমান বিষয় নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করেই দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশে এই বহিষ্কারের আদেশ দেয়া হয়েছে বলে দলের দপ্তর নিশ্চিত করেছে।
ওইদিন রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নিম্নবর্ণিত নেতৃবৃন্দকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। বহিষ্কৃত নেতারা হলেন, বাশার সিদ্দিকি- সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। জহির উদ্দিন তুহিন- সভাপতি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল। এজমল হোসেন পাইলট- সাবেক সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। ইকতিয়ার কবির- সাবেক সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। জয়দেব জয়- সাবেক সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। মামুন বিল্লাহ- সাবেক সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। আসাদুজ্জামান আসাদ-সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। বায়েজিদ আরেফিন- সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। দবির উদ্দিন তুষার- সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। গোলাম আজম সৈকত- সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। আব্দুল মালেক- সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। আজীম পাটোয়ারী- সাবেক সদস্য, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ।
এদিকে শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির একাংশের নেতারা ছয় মাসের জন্য স্বল্পকালীন কমিটি গঠনের দাবি জানান।
উল্লেখ্য যে, ৩ জুন রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। নতুন কমিটিতে নেতা হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী যেকোনো বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে বলে জানানো হয়।
এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১১ জুন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির একাংশ। বিলুপ্ত কমিটির নেতারা ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে প্রার্থী হতে ২০০০ সাল পর্যন্ত এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার যে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা তুলে দেওয়ার দাবি করেন। কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বয়স্ক ছাত্র নেতাদের যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে পদায়ন করে তাদের পছন্দের ছাত্রদের দিয়েই কমিটি করতে চান। এরপর থেকে ছাত্রদলের একাংশ আন্দোলন করে আসছে। শনিবার দুপুরে এই বিদ্রোহীরা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমদের ওপর চড়াও হয়। এরপর সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ছাত্রদলের ‘বয়স্ক’ নেতাদের সকল দাবি নাকচ করে আন্দোলনকারীদের এই মুহূর্তে কিছু না বলার নির্দেশ দেন তারেক রহমান। কিন্তু রাতেই সেই নির্দেশ অমান্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্রদলের ‘বয়স্ক’ ১২ বিদ্রোহী নেতাকে বহিষ্কার করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।