ডেস্ক নিউজ
এমপিদের কর্মকাণ্ডে নজরদারি : কয়েকটি সংস্থার রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে, আমলনামা তৈরি করছেন সাংগঠনিক সম্পাদকরাও
টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে ২০১৯ সালে সরকার ও দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই জালে আটকা পড়ে ‘ক্ষমতাহীন’ হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে অনেক রাঘববোয়ালকেও। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় কৌশলে শুদ্ধি অভিযান বহাল রেখে ক্লিন ইমেজের, দক্ষ ও ত্যাগী নেতাদের খুঁজছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নৌকার জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাইয়ে গোপন মাঠ জরিপ করছে দলটি। নিবিড় নজরদারি করা হচ্ছে দলীয় সংসদ সদস্যদের কর্মকাণ্ড। তৈরি হচ্ছে তাদের আমলনামা। এ নিয়ে কাজ করছেন সাংগঠনিক সম্পাদকরাও। ইতোমধ্যে কয়েকটি সংস্থার রিপোর্ট রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে।
জানা গেছে, দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, দলে বিএনপি-জামায়াত পুনর্বাসন, স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা, আলাদা বলয় তৈরি, ক্যাসিনো, মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকাসহ নানা ধরনের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে শতাধিক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। এদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন সময় সরকার ও দলকে বিব্রত হতে হচ্ছে। অন্যদিকে ¤øান হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন-অর্জন। এদের আমলনামায় ক্ষুব্ধ দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। দলীয়প্রধানের নিজস্ব জরিপ টিম ও বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে প্রতি তিন মাস পরপর জরিপ রিপোর্ট আপডেট করা হচ্ছে। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নানাভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপর দলীয়প্রধানের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
‘অ্যাকশন’ শুরু! : সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও দলে শুদ্ধি অভিযানের ‘চমক’ থাকছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল, মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে সংসদ সদস্য- অভিযানে বাদ যাবেন না রুই-কাতলারাও। সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যারা ভাবমূর্তির সংকট তৈরি করছে, তাদের কিছুতেই ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর দলীয় সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য
পঙ্কজ দেবনাথকে। সূত্রমতে, এরকম অব্যাহতির ‘শোকজ’ চিঠি আরো অনেকেই পাবেন।
অন্যদিকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, কুমিল্লা-৪ আসনের রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, বরগুনা-২ আসনের শওকত হাচানুর রহমান রিমন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের আনোয়ারুল আজীম আনার, কক্সবাজার-৩ আসনের সাইমুন সরওয়ার কমল, চট্টগ্রাম-১২ সামছুল হক চৌধুরী, ল²ীপুর-১ আনোয়ার হোসেন খান, নোয়াখালী-৪ একরামুল করিম চৌধুরী, নোয়াখালী-৩ মামুনুর রশিদ, চাঁদপুর-২ নুরুল আমিন রুহুল, কুমিল্লা-২ সেলিমা আহমেদ, সুনামগঞ্জ-১ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ফরিদপুর-৩ খন্দকার মোশারফ হোসেন, ফরিদপুর-১ মঞ্জুর হোসেন বুলবুল, নরসিংদী-৫ রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, ঢাকা-৭ হাজী সেলিম, ঢাকা-৫ মনিরুল ইসলাম মনু, ময়মনসিংহ-৬ মোসলেম উদ্দিন, জামালপুর-৪ এর সংসদ সদস্য এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান।
ক্লিন ইমেজের ‘প্রার্থী’র খোঁজে আ’লীগ : নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ধরে নিয়ে প্রতিটি আসনেই এবার শক্তিশালী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে ক্ষমতাসীনরা। টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মরিয়া দলটি ইতোমধ্যেই নৌকার জনপ্রিয় কাণ্ডারি খুঁজতে শুরু করেছে। সূত্রমতে, উন্নয়ন এবং সুশাসনের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়েসহ একের পর এক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু গত ১৩ বছরে অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব, কোন্দল, বিভাজন ও গ্রুপিংয়ে বিভক্ত তৃণমূল আওয়ামী লীগ। দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট এসব দ্ব›দ্ব নিরসনে বারবার তাগিদ দিয়েছেন সভাপতি শেখ হাসিনা। কিন্তু তার নির্দেশ উপেক্ষা করে তৃণমূলে অবমূল্যায়িত হয়েছেন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা। জানা গেছে, গত ১৩ বছরে বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদতদাতা এবং দ্ব›দ্ব-কোন্দলে জড়িত মন্ত্রী-এমপিদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এসব আসনে আসবে নতুন মুখ। দলের জন্য নিবেদিত, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ভোরের কাগজকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নে প্রার্থীর রাজনৈতিক অবদান, জনপ্রিয়তা, বাস্তবতা, এলাকার কিছু অঙ্ক এবং রাজনীতি ও দলের প্রতি প্রার্থীর আনুগত্য, শৃঙ্খলাবোধ সবকিছু মিলিয়ে বিবেচনা করা হয়। প্রার্থী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে অবশ্যই সেটি গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়া হবে। তবে তার অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করা হবে। রাজনৈতিক জীবনে এক-দুইবার মানুষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুল করতে পারেন। তবে সেটি অপরাধের পর্যায়ে পড়লে এবং বারবার করলে নিঃসন্দেহে তিনি মনোনয়নের অযোগ্য হবেন।