ডেস্ক নিউজ
ডলার-সংকটের কারণে অনেক পণ্যের আমদানি নিরুত্সাহিত করেছে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কমানোর ফলও মিলছে। চলতি বছরের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে অর্থাত্, এই এক মাসের ব্যবধানে আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খোলার হার কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। আগের মাসেও এই হার কমেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী আগস্টে এলসি খোলা হয়েছে ৬৩৩ কোটি ২৯ লাখ ডলারের। পরের মাসে, অর্থাত্ সেপ্টেম্বরে এটি আরো কমে দাঁড়ায় ৫৭০ কোটি ২৪ লাখ ডলারে। এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে এলসি খোলার হার।
উল্লেখ্য, জুলাই মাসে দেশে মোট আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৫৪৭ কোটি ডলার পণ্যের, যা জুন মাসের তুলনায় ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, এপ্রিল মাস থেকে আমদানি কমতে শুরু করে। আমদানি কমতে থাকলেও রপ্তানি কমে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। ১৩ মাস পর গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কমতে দেখা গেছে। এদিকে রেমিট্যান্সও কমছে। সার্বিকভাবে লেনদেনে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। অবশ্য অর্থবছরের শুরুতেই সংকট সামলাতে সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, বিদেশি মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে গত ৪ জুলাই আমদানি ঋণপত্র খোলার ওপর কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়। গাড়ি, স্বর্ণ, টিভি, ফ্রিজসহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানির এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয় শতভাগ। আর জ্বালানি, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ কিছু পণ্য বাদে অন্য সব ক্ষেত্রে এলসি মার্জিনের ন্যূনতম হার ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
অর্থাৎ, এলসি খোলার সময়ই আমদানিকারকের নিজস্ব উত্স থেকে অর্থ জোগানোর চাপ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এলসি খোলার হারও কমে গেছে। এ ছাড়া রপ্তানি আয় আসার এক দিনের মধ্যে ডলার নগদায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডলারের দর নিয়ন্ত্রণের জন্য এক ব্যাংকের রপ্তানি আয় অন্য ব্যাংকে ভাঙানোর ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। ইডিএফ থেকে নেওয়া ঋণ কেবল রপ্তানি আয় বা জমা থাকা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে করোনার সময় দেওয়া শিথিলতার মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এখন ৩০ লাখ ডলারের বেশি আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ২৪ ঘণ্টা আগে জানাতে বলা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমদানি ব্যয় কমাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তার ফলও পাওয়া যাচ্ছে। আমদানির উল্লম্ফন কিছুটা কমেছে। কিন্তু খারাপ খবর হচ্ছে, রপ্তানি আয়ও কমতে শুরু করেছে।