নাটোর প্রতিনিধি
একমাত্র ছোট ভাই জোহাকে নিয়ে সুখেই কাটছিল শ্রাবনী আক্তার মিমের জীবন। ক্ষুদ্র্র ব্যাবসায়ী বাবার সংসারে কখনও অভাব বুঝতে পারেনি মিম। ছোটবেলা,থেকেই মেধাবী মিম ৫ম শ্রেণীতে জিপিএ ৫ সাথে বৃত্তি পায়। ভর্তি হয়
৬ষ্ঠ শ্রেণীতে। কিন্তু হঠাৎ আচমকা এক ঝড়ে লন্ড-ভন্ড হয়ে যায় পুরো সংসার। বাবার আদর আর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়ে কিংকুর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরে সে। উপায়ন্ত না পেয়ে মা আর ছোট ভাইয়ের সাথে পাড়ি জমায় নানা বাড়ি। আন্টি আর মামাদের সহায়তায় নানা-নানীর কাছ থেকে পাওয়া সামান্য সম্পত্তিতে ঠাঁয় হয় মাথা গোঁজার। কিন্তু খরচের অভাবে বন্ধ হবার উপক্রম হয় পড়ালেখা। এমন অবস্থায় বড় আন্টি বাড়িয়ে দেন সহায়তার হাত। শত কষ্টে চলতে থাকে মিমের পড়ালেখা। শুরু হয় মিমের সংগ্রামী জীবন। দীর্ঘদিন পর বাবার সাথে সংযোগ হলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন,এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেলে তবেই তিনি মিমের পড়ালেখার খরচ দেবেন। বাবার সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে মিম।অবশেষে সে অর্জন করলো জিপিএ ৫।
সংগ্রামী মিমের বর্তমানে বসবাস সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া বাজার এলাকায়। তিনি দিঘাপতিয়া বাজারের মুক্তিযোদ্ধা ময়েন উদ্দীন কুড়ানের নাতনী। তার বাবা নাম আজিজ সোনার। বাড়ি গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় মধ্যপাড়া গ্রামে।
মিম দিঘাপতিয়া বাজার এলাকার উত্তরা বালিকা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের
শিক্ষার্থী হিসেবে এসএসসিতে অর্জন করে জিপিএ ৫।
মিমের মা জয়নব খাতুন বিউটি জানান, তিনি মিমকে ঠিকমত দুমুঠো ভাত দিতে পারেননি। কোন প্রাইভেট দিতে পারেননি। তার বড় আপা আর দুলাভাই মিমকে পড়ালেখার সমস্যায় সবসময় পাশে থেকে সহায়তা করেছেন। বাবার আদর বঞ্চিত মিম যত কষ্ট করে জিপিএ ৫ অর্জন করেছে তার জন্য তিনি গর্বিত।
মিম জানান,তিনি এইচএসসি তেও বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা শেষ করে এমবিবিএস পাশ করতে চান। পড়ালেখা শেষে ডাক্তার হিসেবে দরীদ্র -অসহায়,মানুষদের সেবা করতে চান।
এক প্রশ্নের জবাবে মিম জানান,বাবা তাকে পড়ালেখার খরচ দিতে চেয়েছেন।
তবে পড়ালেখার প্রয়োজনীয় খরচ না পেলে কিভাবে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
মিমের নানা মুক্তিযোদ্ধা ময়েন উদ্দীন কুড়ান জানান,মিম জিপিএ ৫ পাওয়ায় তিনি গর্বিত। মিমের স্বপ্নের কথা শুনে তিনি আবেগাপ্লুত। মিমের স্বপ্নের তিনি বাস্তবায়ন চান এমন দাবি করে তিনি মিমকে সহযোগিতা করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।