প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সম্মিলিত প্রচেষ্টার পাশাপাশি উদ্ভাবনী কর্ম পরিকল্পনা এবং কার্যকর পর্যবেক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে এসডিজি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি সম্মিলিত প্রচেষ্টার পাশাপাশি যথাযথ উদ্ভাবনী কর্ম পরিকল্পনা ও কার্র্র্র্র্র্র্র্র্র্যকর পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব।
শেখ হাসিনা গতকাল সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জেনারেল ইকোনমিক ডিভিশন (জিইডি) আয়োজিত ‘এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ক তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং এসডিজি অর্জনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার এ লক্ষ্যে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেবে। তিনি বলেন, আমরা এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য নীতি সহায়তা এবং তহবিল প্রদান অব্যাহত রাখব, তবে অবশ্যই তহবিলের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং অপচয় রোধ করতে হবে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক এ লক্ষ্যমাত্রাকে দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিজের উপযোগী করে প্রণয়ন করার কার্যক্রম শুরু করেছে যা এসডিজি স্থানীয়করণ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এ কার্যক্রমের আওতায় ১৭টি অভীষ্ট হতে ৩৯টি সূচককে বাংলাদেশের জন্য ‘এসডিজি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে সাথে প্রতিটি জেলার বাস্তবতা বিবেচনায় একটি করে অতিরিক্ত সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের পথে আমরা সাত বছর অতিক্রম করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত দুই বছর কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এসডিজি বাস্তবায়ন গতি কিছুটা মন্থর হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সময়োচিত প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান ও যথাযথ নীতি সহায়তা প্রদানের কারণে অর্থনীতি আবারো ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসছে। তিনি বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা সব থেকে গুরুত্ব দেবো সেটাও নির্দিষ্ট করা দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্যশস্যÑ প্রতিটি জিনিসের ব্যবহারেই সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ আমরা জানি কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট মন্দার ধাক্কা সবখানেই দেখা দিচ্ছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়ক (ভারপ্রাপ্ত) তুওমো পাউতিয়ানেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ। জিইডির সদস্যসচিব ড. মো: কাওসার আহমেদ বাংলাদেশের এসডিজি অগ্রগতি এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা পেশ করেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে বেসরকারি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ইতোমধ্যেই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগ পরিবেশ অধিকতর সহায়ক করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বেসরকারি খাত আরো বেশি গতিশীল হবে। তিনি বলেন, দেশের সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে ২০১৩ সালে আমরা জাতিসঙ্ঘের কাছে মোট ১১টি অভীষ্টের প্রস্তাব করেছিলাম। এর মধ্যে ১০টি অভীষ্টই জাতিসঙ্ঘ হুবহু অনুসরণ করে, অবশিষ্ট অভীষ্টটিও অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে সারা দেশে এক লাখ ৮৩ হাজার তিনটি গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়াও কক্সবাজারে ৬৪০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে নতুন বাড়ি করে দিয়েছি। মোট চার হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার নতুন বাড়ি পাবে। তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘের সব সদস্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম পাঁচ বছরে এসডিজি অর্জনে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি লাভ করেছে এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশকে ‘এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করেছে। সরকারের উন্নয়ন নিয়ে যারা সমালোচনা করেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীতে বসে স্বাধীন গণমাধ্যমের সুযোগে ঢালাও সমালোচনা না করে তৃণমূল পর্যায় ঘুরে এসে স্বচক্ষে উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করে বক্তব্য দেয়ার আহ্বান জানান।