কক্সবাজারের বাসিন্দাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য। সেজন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, যত্রতত্রভাবে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করবেন না। কক্সবাজারে আমরা অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছি। পুরো কক্সবাজারকে ঘিরে একটা মাস্টার প্লান করার আমরা নির্দেশ দিয়েছি। এর উন্নয়ন যেন অপরিকল্পিতভাবে না হয়ে পরিকল্পিতভাবে হয়। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই যে বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে, এর পর্যটনের ক্ষেত্রটি আরও প্রসারিত করা হবে। দেশীয় পর্যটকদের জন্য যেমন সুযোগ সৃষ্টি করা হবে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয় করার সেই উদ্যোগটাই আমরা নিতে চাচ্ছি। তাছাড়া এটি আন্তর্জাতিক এয়ার রুটে পড়ে। তাই কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ চলমান রয়েছে। এই বিমানবন্দরটি যখন হবে, তখন পশ্চিমা দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যারা যায়, তারা কিন্তু এই কক্সবাজার থেকেই রিফুয়েলিং করবে। তিনি বলেন, রিফুয়েলিংয়ের ক্ষেত্রে একেক সময়, একেক দেশ অগ্রাধিকার পায়। এক সময় হংকং ছিল। এরপর থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর- এখন দুবাই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কক্সবাজারই হবে আন্তর্জাতিক আকাশ পথে রিফুয়েলিংয়ের একটি জায়গা। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক করার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারই হবে আন্তর্জাতিক আকাশ পথে রিফুয়েলিংয়ের জায়গা।
আজ বুধবার কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত বহুতল ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে আমরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম করেছি, ফুটবল স্টেডিয়ামও হবে। সেখানে অন্যান্য খেলাধুলার পুরো করা হবে। যেকোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট যাতে এখানে আয়োজন করা যায়, আমরা সে ব্যবস্থাটিও করছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের আগে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুই সমুদ্রসীমা আইন করেছিলেন। বিশাল সমুদ্রে আমাদের অধিকার নিশ্চিত করতে জাতির পিতা আইনটি করে দিয়ে যান। আমাদের দুর্ভাগ্য, তার পরের বছর ৭৫ সালেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর যারা ক্ষমতা দখল করেছিলেন, তারা কেউই এ সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, ‘৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমি প্রথম এ উদ্যোগটি গ্রহণ করি। এজন্য অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে কাজ করতে হয়। আমরা অনেক দূর কাজ করে যাই। কিন্তু এর পরবর্তী সময় ২০০১ থেকে ২০০৮ সালে আমরা দেখেছি তখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ২০০৮ এর নির্বাচনে সরকারে এসে তখন থেকে আমরা আবার উদ্যোগ নেই। আজ সমুদ্রসীমায় আমরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন এই সমুদ্র সম্পদ যেন আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, সে ব্যবস্থাটি আমরা করতে চাই। বুধবার সকাল ১১টা ২০মিনিটের সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
কক্সবাজার প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো: শহীদ উল্লাহ খন্দকার ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব) ফোরকান আহমেদ।