ডেস্ক নিউজ
বিদেশ থেকে অর্থ এনে কিছু বেসরকারি সাহায্য সংস্থা (এনজিও) তা সরকারবিরোধী কাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি গরিবকে সহায়তার নামে অর্থ এনে তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যয় করছে। এ ধরনের এনজিওগুলোকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বলা হয়, কয়েকটি এনজিও বিদেশ থেকে অর্থ এনে তা দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এ কারণে সেসব এনজিও বিদেশি অর্থ এনে কোথায়, কীভাবে ব্যয় করছে- তার ওপর কঠোর নজরদারি করতে হবে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে এটি বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বিষয়টি নজরদারি করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে এনজিওর কার্যক্রমে নজরদারির মাধ্যমে সরকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি এনজিও বিদেশ থেকে অর্থ এনে তা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় জনকল্যাণের নামে সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক মহলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে এসব অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৯ সালে তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই একটি এনজিও সরকারের বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠে। ওই এনজিওটি বিরোধী দলের সঙ্গে আঁতাত করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় জড়িত হয় বলে দাবি গোয়েন্দা সংস্থার। আরও তিনটি এনজিও সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদে মদদ দিতে থাকে। এমনকি ছোট ছোট এনজিও মানুষকে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করে। এর পর থেকেই এনজিওগুলোর ওপর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে সরকার।
অভিযোগ রয়েছে, অতীতে দেশকে অস্থিতিশীল করতে কোনো কোনো এনজিও বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে অসন্তোষ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেছে। ওই সব এনজিও দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে পারে আশঙ্কা করে সরকার তাদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এরই অংশ হিসেবে তিনটি এনজিওকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণকাজ চালাতে নিষেধ করেছে সরকার।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রায় আড়াই হাজার এনজিও রয়েছে। এর মধ্যে ২৫০টি বিদেশি এবং ২ হাজার ২৪৪টি দেশি এনজিও রয়েছে। যথাসময়ে নিবন্ধন নবায়ন না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত এক দশকে এনজিও ব্যুরো ৪৬৪টির নিবন্ধন বাতিল করেছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তাপুষ্ট সংস্থাও রয়েছে। আবার নতুন নতুন এনজিও নিবন্ধনও পেয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যেসব এনজিও সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে, সেগুলোর ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছেন গোয়েন্দারা। তবে কিছু কিছু এনজিও গরিবদের সহায়তার নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে মদদ দিতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিবিড়ভাবে তাদের পর্যবেক্ষণ করছে। কোনো এনজিওর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনজিওগুলো যেন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আড়ালে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহূত না হতে পারে, তা নজরদারি করবে গোয়েন্দা সংস্থা।
সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এনজিওগুলোর মধ্যে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সেক্রেটারি জেনারেল নুর খান বলেন, সরকার সুকৌশলে দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে। এ কারণে গোয়েন্দা তদারকি শুরু করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার দিতে হবে। সরকারবিরোধী কার্যক্রম করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনতে কারও আপত্তি নেই।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। প্রতিষ্ঠানটির ফোকাল পারসন অ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকারের এমন পদক্ষেপ অবশ্যই ইতিবাচক। কারণ, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে সরকারকে জানানো উচিত। সেবাধর্মী কার্যক্রম কিংবা কোনো সভা-সেমিনার করতে হলে অবশ্যই আগে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও জুডিশিয়াল কর্মকর্তারাও সেখানে থাকবেন।