ডেস্ক নিউজ
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নামের এক অভিশাপে মৃত্যুপুরী গোটা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল এবং ভারতের মতো দেশগুলোতে এই ভাইরাসের তাণ্ডব আগের সব মহামারিকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশেও ভয়াল ছোবল দিয়েছে ভাইরাসটি। আক্রান্ত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। প্রাণ ঝরেছে হাজার হাজার।
তবে উন্নত দেশগুলোতে, এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও যেভাবে এ ভাইরাস লাশের সারি ফেলেছে, বাংলাদেশ সে তুলনায় এখন পর্যন্ত কিছুটা হলেও স্বস্তির জায়গায় আছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তারা এক্ষেত্রে ভাইরাস মোকাবিলায় ঘোষিত সাধারণ ছুটি বা লকডাউন, চিকিৎসাসেবাসহ সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন। পাশাপাশি জনসচেতনতা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও পাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা।
এই মহামারিকালে দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যখাত বিশেষত চিকিৎসাসেবায় ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থাপনা ও ই-সার্ভিস অনন্য ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনো মহামারি নিয়ন্ত্রণে তথ্য ব্যবস্থাপনা অন্যতম প্রধান অংশ। যে প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি ও সামগ্রিক রোগ নজরদারির তথ্য, নিয়মিত রিপোর্টিং, রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, রোগ পর্যবেক্ষণ ও রিসোর্স ম্যাপিং করা হয়। করোনার প্রকোপের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সার্ভিস (এমআইএস) শাখার নেতৃত্বে তথ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চলছে দক্ষতার সঙ্গে। ফলে বিভ্রান্তি-গুজব প্রতিরোধ করে গড়ে তোলা গেছে জনসচেতনতা, যা মহামারি মোকাবিলায় দিচ্ছে আশাব্যঞ্জক ফল।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটিমাত্র আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে এ ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হতো। পর্যায়ক্রমে বাড়তে বাড়তে এখন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ১২৭টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি, ৩৫টি জিন এক্সপার্ট, ২৬৬টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট ল্যাবরেটরিসহ মোট ৪২৮টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, গত ৬ মে পর্যন্ত দেশে ৫৫ লাখ ৮২ হাজার ২৬৩টি নমুনা পরীক্ষা করে সাত লাখ ৬৯ হাজার ১৬০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ভাইরাসটিতে ৬ মে পর্যন্ত ঝরে যায় ১১ হাজার ৭৯৬ প্রাণ। একই সময়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন সাত লাখ দুই হাজার ১৬৩ জন।
দেশের প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় চার হাজার ৫১৬ দশমিক ৩৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৬৯ দশমিক ২৬ জন। সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ১২২ দশমিক ৯৪ জন। করোনার শুরু থেকে ৬ মে পর্যন্ত বিমান, সমুদ্র, স্থলবন্দর ও রেলস্টেশনে ২১ লাখ ২৮ হাজার ২২৮ জন বিদেশফেরত যাত্রীর হেলথ স্ক্রিনিং হয়। এর মধ্যে সাত লাখ ১৯ হাজার ৬৪৪ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয় এবং এক লাখ ২৫ হাজার ১২৩ জন সন্দেহভাজন করোনা রোগীকে রাখা হয় আইসোলেশনে।