ডেস্ক নিউজ
করোনা টিকা বর্তমানে একটি বিশেষ উপাদানে পরিণত হয়েছে। এটি বর্তমানে এমন একটি অস্ত্র, যা ভূরাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে যে যেভাবে পারছে সে সেভাবে এর ব্যবহার করছে। আমরা যদি মানবিক দৃষ্টিতে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে বিশ্বের টিকাদান কর্মসূচি মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে আছে। আজকে করোনা মহামারি শুধু বৈশ্বিক মহামারি নয়, এটি এখন বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়েছে এবং সে যুদ্ধে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সৈনিক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছি।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৩৯২তম পর্বে মঙ্গলবার আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন- নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনূর রহমান। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, করোনা টিকা বর্তমানে একটি বিশেষ উপাদানে পরিণত হয়েছে। এটি বর্তমানে একটি অস্ত্র, অর্থাৎ ভূরাজনৈতিক অস্ত্র এবং এটাকে যে যেভাবে পারছে সে সেভাবে এটাকে ব্যবহার করছে। আমরা যদি মানবিক দৃষ্টিতে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো বিশ্বের টিকাদান কর্মসূচি মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে আছে। এই সংকটের পেছনে আমরা যেটা দেখছি যে টিকা উদপাদন করছে মাত্র কয়েকটি দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারত; হাতে গোনা মাত্র এই কয়েকটি দেশ এই টিকা উদপাদন করছে। আর বিশ্বের বাকি সব দেশগুলো হচ্ছে এদের ভোক্তা। এখন এসব দেশের মানুষদের মানবিক সেবার জন্য টিকা উদপাদনকারী দেশগুলো যেভাবে কাজ করছে সেগুলোর পেছনে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক স্বার্থ ও বাণিজ্যিক স্বার্থও জড়িত আছে। সব কিছু মিলিয়ে শুধু বাংলাদেশে নয়, টিকা সারা বিশ্বে এখন সংকটে পরিণত হয়েছে। করোনা যখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো তখন থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী যে উপায় হচ্ছে সেটা হলো টিকা দেওয়া যার মাধ্যমে আপনি নিজে সুরক্ষিত থেকে অন্যকে তথা নিজের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। টিকার চাহিদা, উদপাদন ও সরবরাহ, এই বিষয়টা যখন সবাই উপলদ্ধি করতে পারলো তখন এর মধ্যে এমন একটি পার্থক্য তৈরি হলো যে, যার যার দেশের জন্য টিকা সংগ্রহ করাটা একটা চ্যালেঞ্জের মুখে গিয়ে দাঁড়ালো। বাংলাদেশও এই কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ে গেল। এখন আমরা দেখছি যে এই টিকা নিয়ে অনেক দেশের সেবা সংস্থাগুলো অনেক কথাই বলছে কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এখনো অনেক গরিব দেশে এই টিকার একটি ডোজও পৌঁছায়নি। এখন যারা ধনী দেশ বা উন্নত দেশ রয়েছে তাদের কাছে এই টিকার ৯৮% ভোক্তা হয়েছে ও যারা গরিব দেশ বা স্বল্পোন্নত দেশ বা উন্নয়নশীল দেশ রয়েছে তাদের কাছে পৌঁছেছে মাত্র ২% টিকা। এখন বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা যেটা দেখতে পাবো, সেটা হলো বাংলাদেশ এই টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে শুরুর দিক থেকে খুবই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এই টিকা সরবরাহের দিক থেকে বাংলাদেশে যে সব জাতীয় কমিটি করা হয়েছে তার মধ্যে শুরু থেকে আমি একজনকে দেখতে পাচ্ছি, যিনি হচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; তিনি তাঁর বিজ্ঞতা ও পক্কতা দিয়ে এটাকে সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে বাংলাদেশ এখনো একটা অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অবস্থা অনেক শোচনীয় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সব থেকে বড় দেশ আমেরিকায় এখন পর্যন্ত ৬ লাখ মানুষ মারা গিয়েছে ও ইউরোপেও এর সংখ্যা দিন দিন এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে শিখিয়েছেন কিভাবে দুর্যোগ মুহূর্তে দেশের মানুষের পাশে থাকতে হয়। সারা পৃথিবী আজ বিপর্যস্ত কোভিড-১৯ এর ছোবলে। গত বছরের মার্চ থেকেই এর জন্য শুরু হয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকার সংকট যা এখনও প্রকট। আবারও চ্যালেঞ্জে আমাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস প্রবাহের বিস্তার রোধ করতে সরকার ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এর অংশ হিসেবে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি, বিনামূল্যে মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবানসহ করোনা প্রতিরোধমূলক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছি আমরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারকে সহযোগিতা করতে জনসচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন কাজ করেছি আমরা। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমরা আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে দেশের প্রতিটা জেলা উপজেলায় আমাদের কর্মসূচির বিস্তার ঘটিয়েছি। আজকে যখন আমরা কথা বলছি, বাংলাদেশের অবস্থা একটু ভয়াবহ কারণ প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে এবং পাশাপাশি আমরা লক্ষ করছি এতো সচেতনতার পরও কিন্তু মানুষজন নির্দেশনা কম মানছে। করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বের বড় বড় দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সব অর্থনীতির সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। আমরা গর্ব করে বলি আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নিজে হাতে গড়া সংগঠন। যেহেতু সেবা আমাদের দলের মূল নীতি, তাই সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করি আমরা। টিকা আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা। করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্থানীয় প্রশাসন যথেষ্ট কাজ করছে। করোনাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অবদান মানবতার ইতিহাসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আওয়ামী লীগ দল এবং তার সকল সংগঠনগুলো অসহায় মানুষের জন্য রাত দিন এক করে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের কল্যাণে যেভাবে কাজ করেছেন সত্যিই তার কোনো বিকল্প নেই। যদিও বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তারপরেও আমাদের সমাজে একটি শ্রেণির লোক আছে যারা দিন আনে দিন খায়। তাদের এই লকডাউন পরিস্থিতিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তাই আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সংগঠনের সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে যাতে যেকোনো ভাবেই হোক এই শ্রেণির মানুষগুলো যাতে খাদ্য মন্দায় না ভুগে সে জন্য আমরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি।
ড. শাহিনূর রহমান বলেন, এই করোনাকালীন সময়ে বিএনপি-জামায়াত শুরু থেকেই টিকা নিয়ে ব্যঙ্গ করে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে যা আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। এখন এই মুহূর্তে বাঙালি জাতির একমাত্র ভরসা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে করোনাকালীন যে মহাযুদ্ধ সেখানে এখন পর্যন্ত আমাদেরকে টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। কারণ যে সময়টিতে আমরা টিকার কথা কল্পনাও করিনি যেখানে অনেক উন্নত দেশও টিকা সংগ্রহ করতে পারেনি, সেখানে সে সময়ে দ্রুততম সময়ে মধ্যে শেখ হাসিনা আমাদের দেশে টিকা সংগ্রহের জন্য ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন এবং গণটিকা দান কর্মসূচি চালু করেছিলেন। বতমান সময়ের প্রেক্ষাপট যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে, করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ কমছে না। আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য পর্যাপ্ত প্রতিরোধক টিকা ব্যবহার করে সুফল পেয়েছে। পুরো বিশ্ব করোনা সংকট কাটাতে এখন তাকিয়ে আছে উন্নত দেশগুলোর দিকে। কারণ উৎপাদিত টিকা তারা সংগ্রহ করে মজুত করে রেখেছে তাদের জনসংখ্যার চেয়েও। খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মৌলিক অধিকারের মতো করোনার টিকা পাওয়া একটি মৌলিক ও মানবিক অধিকারে পরিণত হয়েছে প্রতিটি দেশ ও জাতির কাছে। প্রতিটি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র করোনা মহামারির ভয়াল প্রকোপে অতিষ্ঠ ও পর্যুদস্ত। ঠিক এমন একটি সময়ে করোনার কার্যকরী একাধিক টিকা আবিষ্কার বিদ্যমান মানবিক বিপর্যয় রোধে বিশ্ববাসীর কাছে একটি বিজয় হাতিয়ার হিসেবে দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু জাতি রাষ্ট্র এই হাতিয়ার ইতোমধ্যে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। কিন্তু অধিকাংশ রাষ্ট্র বিশেষ করে দুর্বল ও পেশি শক্তিহীন রাষ্ট্রের কাছে তা কবে আসবে সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী দশটি টিকা মানুষের মধ্যে প্রয়োগ করার জন্য বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল অনুমতি দিয়েছে, এরমধ্যে সাতটি টিকা সবচেয়ে বেশি মানুষকে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখন খারাপ অবস্থা চলছে আমাদের নিকট প্রতিবেশি দেশ ভারতে। ভারতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেখানে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ক্ষতিকর বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। সেখানে সংক্রমণ এবং মৃত্যু এতটাই বেড়েছে যে, সবার মধ্যেই আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নানাভাবে যোগাযোগ, যাতায়াত বেশি হওয়ায় ভয় বেশি। করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ফলে পরিস্থিতি এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে গিয়েছে। আজকে যে করোনা মহামারি সেটা শুধু বৈশ্বিক মহামারি নয়, এটি এখন বিশ্ব যুদ্ধে পরিণত হয়েছে এবং সে যুদ্ধে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সৈনিক হয়ে অবতীর্ণ হয়েছি।