ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অধীন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি শনিবার দ্বিতীয় একটি করোনা ভ্যাক্সিনের অনুমোদন দিয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা পি টি আই জানিয়েছে।
কোভ্যাক্সিন নামের এই ভ্যাক্সিনটি ভারতেই আবিষ্কৃত হয়েছে। দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা আই সি এম আরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভারত বায়োটেক এই ভ্যাক্সিনটি তৈরি করেছে।
এ নিয়ে ভারতে দুটি করোনা ভ্যাক্সিন জরুরীভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হল।
শুক্রবার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকাকে অনুমোদনের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি।
বিশেষজ্ঞ কমিটির ছাড়পত্রের পরে দুটি ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত নথিই এখন ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে যাবে চূড়ান্ত স্বাক্ষরের জন্য।
রবিবার ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক একটি সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ঘোষণা করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
অক্সফোর্ডের টিকাটি ভারতে তৈরি করছে সিরাম ইন্সটিটিউট। এটি ছাড়াও ভারতের নিজস্ব টিকা কোভ্যাক্সিন এবং ফাইজারের টিকাও জরুরী ভিত্তিতে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল।
অক্সফোর্ড – অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে টিকাটি ভারতে সিরাম ইন্সটিটিউট তৈরি করছে, সেটি নিরাপদ কীনা তার পরীক্ষা ভারতে ১৬০০ লোকের মধ্যে চালানোর কথা ছিল। কিন্তু ঠিক কতজনের ওপরে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং কী তথ্য তা থেকে বেরিয়ে এসেছে, সেই গোপন তথ্য শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছেই জমা দিয়েছে সিরাম ইন্সটিটিউট।
এত কম স্বেচ্ছাসেবকের ওপরে পরীক্ষা চালানোর পরেও তারা যে ছাড়পত্র পাওয়ার আবেদন করতে পেরেছে, তার কারণ যুক্তরাজ্যে ইতিমধ্যেই এটি ছাড়পত্র পেয়েছে এবং সেখানে তারা টিকাটির কার্যকারিতা নিয়ে যে তথ্য যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দিয়েছে, সেই একই তথ্য তারা প্রমাণ স্বরূপ ভারতেও জমা দিয়েছে।
শনিবার যে কোভ্যাক্সিন টিকাটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। মোট ২৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপরে তৃতীয় পর্যায়ের ‘এফিকেসি ট্রায়াল’ চলার কথা, কিন্তু গত সপ্তাহ পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক নথিভুক্ত হয়েছেন ১৩ হাজারের মতো।
অনুমোদনের জন্য আবেদন জানিয়েছ ফাইজারও। তাদের টিকাটি যেন কোনও ট্রায়াল ছাড়াই ভারতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়, সেটির আবেদন জানিয়েছে ফাইজার । যুক্তি হিসাবে তারা বলছে যে তাদের টিকাটি ইতিমধ্যেই বাজারে চলে এসেছে এবং মানুষকে দেওয়াও হচ্ছে।
এদিকে শনিবার ভারতে করোনাভাইরাস টিকা দেয়ার একটি ড্রাই রান বা মহড়া হয়েছে।
এটি দ্বিতীয় দফার মহড়া। এর আগে ২৮ – ২৯ ডিসেম্বর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম- দেশের এই চার প্রান্তের চার রাজ্যে মহড়া চালানো হয়।
শনিবার প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে তিনটি জায়গায় এই সার্বিক মহড়া চলেছে। দুর্গম কিছু অঞ্চলকেও মহড়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।
প্রতি শহরে তিনটি ভবনের প্রত্যেকটিতে ২৫ জন করে স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন, যারা টিকা গ্রহীতার ভূমিকা পালন করেন। মহড়ার তথ্য ‘কো-উইন’ নামের একটি অ্যাপে নথিবদ্ধ করা হয়। ওই অ্যাপটির মাধ্যমে করোনাভাইরাস টিকার ব্যবস্থাপনা চালানো হবে গোটা ভারতে।
এই ড্রাই রানে পরিকাঠামো যেমন খতিয়ে দেখা হয়েছে, তেমনই যেসব স্বাস্থ্য কর্মী টিকা দেওয়ার কাজে যুক্ত থাকবেন, তাদেরও কাজ খতিয়ে দেখা হয়।
টিকা পরিবহন থেকে শুরু করে রেফ্রিজারেশনে রাখা, স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে পৌঁছানো, কতজনকে একেকদিনে টিকা দেওয়া হবে – এমন প্রতিটা খুঁটিনাটির মহড়া দেওয়া হয়েছে।
সূত্রঃবিবিসি বাংলা