ডেস্ক নিউজ
করোনা সংক্রমণের দুই মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। এই দুই মাসে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতার পক্ষে-বিপক্ষে নানারকম আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে এবং করোনা মোকাবেলায় শুরু থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক বিস্তার লাভ করেনি। আবার অনেকে মনে করছেন, বাংলাদেশ যখন করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে, তখন সবকিছু খুলে দিয়ে বাংলাদেশ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং এর ফলে বাংলাদেশকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে।
তবে এইসব বিতর্কের বাইরে যেটা নিয়ে কারো কোন বিতর্ক বা সংশয় নেই তা হলো বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার কম এবং বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে বিশ্বের সবথেকে সফল দেশগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশে আক্রান্ত এবং মৃত্যুহার যদি তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশে ১.৫৮ হারে মৃত্যু হচ্ছে, যা যেকোন বিবেচনায় বিশ্বে অনুকরনীয়। যারা করোনা মোকাবেলায় সফল দেশ, সেই তালিকায় শুধু এই মৃত্যু হার দিয়ে বাংলাদেশ অবলীলায় স্থান পেয়েছে। যদিও বলা হয় যে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ লক্ষ পরীক্ষা হয়েছে, কাজেই এই সংখ্যক পরীক্ষা দিয়ে মৃত্যুহার যাচাই করা বা করোনা পরিস্থিতি নিরুপন করা সম্ভব নয়। কিন্তু একই রকম সংক্রমণ যে দেশগুলোতে হয়েছে সে দেশগুলোতে যে মৃত্যুহার, সেই মৃত্যুহার অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের থেকে বেশি। এই বিষয়ে আমরা যদি বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি, তাতে আমরা দেখবো যে, সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যুহার হচ্ছে ৬ দশমিক ৯ জন। অর্থাৎ যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের ৬ দশমিক ৯ জনই মৃত্যুবরণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই হার হলো ৫ দশমিক ৮৩ ভাগ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ছয়জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা যদি দেখি ইউরোপে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। ইউরোপের ইতালি এবং স্পেন- এই দুটি দেশে শতকরা মৃত্যুহার দশের উপরে। স্পেনে এটা ১০ দশমিক ১৯ ভাগ এবং ইতালিতে প্রায় ১০ দশমিক ১৪ ভাগ। আর যুক্তরাজ্যে এই হার ৭ শতাংশের কাছাকাছি।
কাজেই আমরা দেখছি যে, যে সমস্ত দেশগুলোতে মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনা এবং বিপর্যস্ত করেছে জনজীবন, সেই দেশগুলোতে মৃত্যুহার ছিল বেশি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, যেকোন অসুখ বিপজ্জনক হয় তখনই, যখন সেই অসুখে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক অসুখ, যেগুলোতে মৃত্যুর সংখ্যা নেই, সেই অসুখ মানুষকে বিচলিত করেনা, আতঙ্কিত করেনা। করোনার আতঙ্কের মূল কারণ দুটি। একটি হলো এখানে সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, অত্যন্ত ছোঁয়াচে। আর দ্বিতীয় কারণ হলো এটায় মৃত্যু ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি, একবার এই রোগ ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে ফেললে বাঁচার সম্ভাবনা কম। আর এই প্রেক্ষাপটে করোনা নিয়ে সারাদেশে লক ডাউন, সামাজিক দুরত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার শোরগোল শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই শোরগোলের মধ্যেও কয়েকটি দেশ করোনা মোকাবেলায় সফল হয়েছে এই বিবেচনায় যে তাঁদের মৃত্যুর হার অনেক কম। আমরা যদি এই দেশগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে যে, সেই দেশগুলো করোনা মোকাবেলা করেছে শুধু মৃত্যুহার কমিয়ে এবং তাতেই তাঁরা করোনা মোকাবেলায় সফল রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এখানে সবথেকে বড় উদাহরণ দেয়া যায় সৌদি আরবকে দিয়ে। সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৩১ হাজার ৯৩৮ জন এবং মারা গেছেন ২০৯ জন। এখানে আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যুহার ০.৬৫ জন। অর্থাৎ শতকরা হিসেবে একজনেরও কম মারা গেছে। সিঙ্গাপুরে মৃতের হার ০.০৯, যেটা সারাবিশ্বে সর্বনিম্ন মৃত্যুর হারে রেকর্ড। যে জন্য সিঙ্গাপুরকে করোনা মোকাবেলায় সবথেকে সফল দেশগুলোর একটি মনে করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত হয়েছে ২০ হাজার ১৯৮ জন এবং প্রাণ হারিয়েছে মাত্র ২০ জন। কাতারেও প্রায় ১৮ হাজার আক্রান্তের মধ্যে মাত্র ১২ জন মৃত্যুবরণ করেছে এবং শতকরা হারে তা ০.০৬ ভাগ। শতকরা ১ ভাগের নিচে মৃত্যুহার রয়েছে আরো একটি দেশ, সেটা হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছে শতকরা ১.৪০ ভাগ। অন্যদিকে বাংলাদেশের চেয়ে কম আক্রান্ত হয়েও বেশি মারা যাবার তালিকায় যে দেশগুলো রয়েছে সেগুলো হচ্ছে ডেনমার্ক, নরওয়ে, মিশর, আর্জেন্টিনাসহ আরো কিছু রাষ্ট্র। এদের মধ্যে ডেনমার্কে বাংলাদেশের থেকে কম আক্রান্ত হয়েছে, ৯ হাজার ৯৩৮ জনের বিপরীতে মারা গেছেন ৫০৬ জন। অর্থাৎ শতকরা ৫ জনের বেশি আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। নরওয়েতে শতকরা তিন ভাগের বেশি আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন আর মিশরে ৬ ভাগের বেশি রোগী মারা গেছেন। কাজেই মৃত্যুর হিসেব দিয়ে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের থেকেও ভালো অবস্থানে আছে এবং যে দেশগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিক। তাঁদের থেকেও ভালো অবস্থানে আছে। আর এই সাফল্যটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সাফল্যটাই বাংলাদেশকে শক্তি দিচ্ছে, সাহস দিচ্ছে এবং অর্থনীতিকে সচল করার জন্য নতুন করে ভাবাচ্ছে।