ডেস্ক নিউজ
আদালত পাড়ার পরিবেশ রক্ষা, নগরীর ওপর চাপ কমানো এবং জনগণ যেন এক জায়গাতেই সরকারী সব সেবা পায়, এ জন্য কর্ণফুলীর তীরবর্তী হামিদচরে ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’ নামের প্রকল্পটির কাজ শুরুর তৎপরতা চলছে। স্থানীয় পর্যায়ের সকল সরকারী অফিস সরিয়ে নেয়া হবে সেখানে। দেশে এটিই হতে যাচ্ছে প্রথম সমন্বিত সরকারী অফিস কমপ্লেক্স। এ লক্ষ্যে চলতি মাসেই সমন্বিত মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিংয়ের একটি নক্সা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদে যাবে।
পরীর পাহাড়সহ চট্টগ্রামের অন্য সরকারি অফিসগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ঐতিহ্যের ধারক এই পাহাড়টিকে রক্ষায় সরকারের অনুশাসনের আলোকে। ইতোমধ্যে পরীর পাহাড়কে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর। সে কারণে চট্টগ্রামে সরকারী অফিসগুলোকে সমন্বিতভাবে একস্থানে আনার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে হামিদচরে। সেখানে সরবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সার্কিট হাউসসহ ৪৪টি সরকারী অফিস। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পরীর পাহাড় রক্ষায় প্রশাসন বদ্ধপরিকর। সরকারী বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে পরিবেশ রক্ষায়। এছাড়া, সমন্বিত সরকারী অফিস ভবন নির্মাণ হলে জনগণও সকল সেবা পাবে একই স্থানে। যার ফলে নথি নিয়ে কিংবা সরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এ জন্য নগরীর চান্দগাঁও-হামিদচর এলাকায় ৭৬ একর জায়গা নির্ধারণ করেছে জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও এ প্রকল্পের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস হামিদচর পরিদর্শন করেন। তিনি বলেছিলেন, দ্রুতই প্রকল্পটির কাজ শুরু প্রক্রিয়া নেয়া হবে। এরপর গত ১৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক প্রকল্পটির বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেদিন জেলা প্রশাসক জানান, চান্দগাঁও মৌজার কর্ণফুলী নদীসংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ রোডে সমন্বিত সরকারী অফিস ভবনের নির্মাণ শুরু করেছেন সরকার। এই অফিস ভবন নির্মিত হলে একই ছাতার নিচে মিলবে সকল সরকারী সেবা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, কর্ণফুলী নদীর তীরে হামিদচরের ৭৬ একর জায়গায় নির্মিত হবে সমন্বিত সরকারী অফিস। নির্মাণকাজ শেষ হতে চার বছর সময় লাগবে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরও জায়গা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। সব মিলে ১১০ একর। চলতি মাসের শেষের দিকে নির্মিতব্য সমন্বিত মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিংয়ের নক্সা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদে যাবে। সেই বৈঠকে প্রকল্পের নক্সা ও ডিপিপিসহ আনুষঙ্গিক সব বিষয় আলোচনা ও চূড়ান্ত করা হবে। এই সমন্বিত অফিস নির্মাণ শেষ হলেই পরীর পাহাড় থেকে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ অন্য সকল সরকারী অফিস সেখানে স্থানান্তর করা হবে। এর ফলে জনগণও একই স্থানে সকল সেবা পাবে। ভোগান্তি কমবে। তিনি জানান, পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠবে ‘সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’। সেখানে চট্টগ্রামের আরও ৩৩টি জরাজীর্ণ সরকারী অফিসও হামিদচরে স্থানান্তর হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সার্কিট হাউজও স্থানান্তর হবে নতুন এই ভূমিতে। পাশাপাশি সেখানে গড়ে উঠবে হাসপাতাল- ট্রেনিং একাডেমি, পরিবহন পুল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, কনভেনশন সেন্টার এবং থাকছে আবাসন ব্যবস্থাও।
পরীর পাহাড় রক্ষায় উচ্ছেদ অভিযান শীঘ্রই ॥ চট্টগ্রামের পরীর পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা থাকায় বিভিন্ন ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসন, যার কারণে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে আদালত ভবন এলাকা। এছাড়া পাহাড় দখল করে আইনজীবীদের ভবন নির্মাণের ফলে পাহাড় ধসসহ পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। যে সব সরকারী সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে, সে সব উচ্ছেদ করা হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, চট্টগ্রামে যে সব সরকারী সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে, তা উচ্ছেদ করা হবে। সেগুলো তালিকা করে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।