ডেস্ক নিউজ
রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ৩ আত্মীয়কে জরিমানা পরবর্তী নানা ঘটনা প্রবাহের কারণে দেশব্যাপী আলোচিত ও প্রশংসিত টিটিই শফিকুল ইসলাম এখন বিনা টিকেটে ভ্রমণেচ্ছু যাত্রীদের কাছে আতঙ্ক। তবে সাধারণ মানুষের কাছে সেলিব্রেটিতে পরিণত হয়েছেন।
এদিকে বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের পর আবার কাজে যোগ দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় দুটি ট্রেন থেকে ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত তিনি এই জরিমানা আদায় করেন। বুধবার দুপুরে শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে এ জরিমানা আদায়ের কথা স্বীকার করেন।
দেশব্যাপী আলোচিত পাকশী বিভাগের সেই টিটিই শফিকুল ইসলামকে একনজর দেখার জন্য ঈশ্বরদী জংশনে এবং পাকশী বিভাগে ভিড় করেন উৎসুক মানুষ।
পশ্চিম রেলের পাকশী বিভাগীয় রেল সূত্র জানায়, বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের পর মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে খুলনা থেকে চিলাহাটিগামী আন্তঃনগর ট্রেন রূপসা এক্সপ্রেসের টিটিই হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন টিটিই শফিকুর ইসলাম। চিলাহাটি থেকে আবার সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে টিকিট চেক করেন। তিনি রাত ১২টায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে পৌঁছান। এ সময়ের মধ্যে তিনি দুটি ট্রেন থেকে ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা জরিমানা আদায় করে সরকারি খাতে জমা দিতে সক্ষম হন।
এরপর বুধবার দুপুরে আবারো তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য বের হন এবং ২টা ২০ মিনিটে ঈশ্বরদী থেকে খুলনাগামী রূপসা ট্রেনে ওঠেন। বিকাল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালনরত ছিলেন।
এর আগে গত শুক্রবার রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ৩ আত্মীয়কে জরিমানা করে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া টিটিই শফিকুল ইসলামকে গত রোববার দায়িত্বে পূণর্বহাল করা হয়। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তা (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম ওইদিন দুপুর ১২টায় এ আদেশ দেন। সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের দুদিন পর মঙ্গলবার তিনি ট্রেনে ডিউটি পান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ৩ আত্মীয়কে জরিমানা পরবর্তী নানা ঘটনা প্রবাহের কারণে দেশব্যাপী আলোচিত ও প্রশংসিত হন টিটিই শফিকুল ইসলাম। তার কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন ঈশ্বরদীর নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ঈশ্বরদীর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং গণমাধ্যম কর্মী খন্দকার মাহবুবুল হক দুদু বলেন, সৎ সাহস নিয়ে সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে টিটিই শফিকুল ইসলাম সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। তিনি অন্যদের জন্য উদাহরণ।
ঈশ্বরদী শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ কিরণ বলেন,টিটিই তিনি এখন পাকশী রেল বিভাগে বিনা টিকেটে ভ্রমণেচ্ছু যাত্রীদের কাছে একদিকে আতঙ্ক এবং সাধারণ মানুষের কাছে সেলিব্রেটি।
এদিকে সাম্প্রতিক ঘটনায় আলোচিত-প্রশংসিত টিটিই শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে এক সাক্ষাতকারে বলেন, মানুষ আমাকে দেখতে আসেন এবং নানা কথা জিজ্ঞাসা করেন। আমি এতে বিব্রত। কেননা, কোনো বাহবা নেয়ার জন্য নয়, সরকারি দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি মাত্র।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রেলমন্ত্রী স্যারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তিনি আমার বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে অতীতের মতো আগামী দিনেও দায়িত্ব পালন করবো।
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপার রজব আলীর ছেলে টিটিই শফিকুল ইসলাম। ২০১৩ সালে লালমনিরহাটে টিটি-গ্রেড-২ হিসেবে রেলওয়ের চাকরিতে যোগ দেন শফিকুল ইসলাম। ১ ছেলে ১ মেয়ের জনক তিনি।