ডেস্ক নিউজ
জাপান ও ইইউ থেকে আসছে ৩৫ লাখ ডোজ, কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার-মডার্নার ২৬ লাখ, চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি চুক্তির ২০ লাখ এসেছে, চলছে দেশে চীনা টিকা উৎপাদনের আলোচনা, শুরু হয়েছে গণটিকার নিবন্ধন
দেশে টিকার সংকট কাটতে শুরু করেছে। চীন থেকে সরকারের কেনা দেড় কোটি টিকার ২০ লাখ ডোজ দেশে এসেছে। এ ছাড়া কোভ্যাক্স থেকে এসেছে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ ও মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ। কোভাক্সের আওতায় জাপান ও ইইউ থেকে আরও ৩৫ লাখ ডোজ টিকা এ মাসের শেষ সপ্তাহে পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চীন ও মডার্নার টিকা আসার পর গতকাল থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে গণটিকার নিবন্ধন। নিবন্ধনের বয়সসীমা কমিয়ে ৩৫ বছর করা হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারের কেনা ৭০ লাখ ডোজ এবং ভারত উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ। চীনের সিনোফার্ম থেকে এসেছে কেনা টিকার ২০ লাখ ডোজ এবং উপহার হিসেবে চীন দিয়েছে ১১ লাখ ডোজ। কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের টিকা এসেছে ১ লাখ ৬২০ ডোজ এবং মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ। এর মধ্যেই সিনোফার্মের টিকা দিয়ে সারা দেশের মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়েছে। ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের।
টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে কিংবা আগস্টের শুরুতে বাংলাদেশ ৩৫ লাখ টিকা পেতে যাচ্ছে। এই ৩৫ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বলে জানা গেছে। ফলে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অভাবে যে ১৫ লাখ লোক দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাচ্ছিলেন না, সেই সংকট কেটে যেতে পারে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের চুক্তি অনুযায়ী অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গতকাল তার বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে জাপান কোভ্যাক্সের আওতায় টিকার চালান পাঠাবে। কোভ্যাক্সের আওতায় বলে এটা বিনামূল্যে পাব। জাপান থেকে আড়াই মিলিয়ন টিকা পেতে পারি।’ জাপান কোন টিকা পাঠাবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাপানের কাছ থেকে আমরা অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা পাব। আর কোভ্যাক্সের আওতায় ইউরোপ থেকে বাংলাদেশ ১০ লাখ টিকা পাবে।’
গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, রাশিয়ার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা স্পুটনিক-ভি কিনতে চুক্তি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। এখন শুধু বাংলাদেশ সরকারের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষা। টিকা কেনার প্রাথমিক সিদ্ধান্তের পর বেশ কিছু বিষয় নিয়ে রুশ সরকারকে সংশোধন দিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে সেসবের সংশোধন এনে দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তি হয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চালান আসার কথা রয়েছে আগামী মাসে। তবে কত ডোজ করে টিকা দেবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।’ সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য গত বছরের শেষ দিকে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। সেই টিকার প্রথম চালান পাওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। কিন্তু দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর চীন থেকে উপহার হিসেবে আসে সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা। পরবর্তীতে চীনের সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ। এই চুক্তির প্রথম চালানে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এখন যৌথভাবে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের উপরাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান। তিনি তার ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানান। হুয়ালং ইয়ান লেখেন, ‘ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যৌথভাবে করোনার টিকা উৎপাদনের জন্য চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এখানকার অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণার পাশাপাশি টিকা উৎপাদন করছে চীন। একই সঙ্গে চীন অনেক দেশের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দেশে টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালাতে সহায়তা করেছে। চীনের তৈরি করোনার টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। ফলে চীনের টিকা আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে।’ টিকা দেশে আসতেই নিবন্ধন ও টিকাদান নিয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। নির্দেশনায় ৩৫ বছরের বেশি সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় আনাসহ কারা এসব টিকা পাবেন সেই তালিকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকার নির্দিষ্ট টিকা কেন্দ্রে (ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বরিশাল) মডার্নার টিকা দেওয়া হবে। আর সব জেলা ও উপজেলায় সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ টিকা নিতে পারবেন না।
৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিক টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশনের করতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে এসএমএসের মাধ্যমে তারিখ জানিয়ে টিকাদান করা হবে। সৌদি আরব ও কুয়েতগামী প্রবাসী শ্রমিকদের ফাইজারের টিকাদানের জন্য নির্ধারিত সাতটি কেন্দ্র সংরক্ষিত থাকবে। কেন্দ্রগুলো হলো- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ রাসেল গাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যান্য দেশের প্রবাসী শ্রমিকরা এই কেন্দ্র বাদে অন্য কেন্দ্রে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন। বিদেশগামী শিক্ষার্থীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত হয়ে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করে টিকার আওতায় আসবেন বলে জানা গেছে।
টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় টিকা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। টিকা দিলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এবং মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায়। বাংলাদেশে অনেক উন্নত দেশের আগেই গণটিকাদান শুরু হয়েছিল। মাঝে সরবরাহ সংকট হওয়ায় কিছুটা ধীর গতি এসেছিল। সরকার টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চীনের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং সে টিকার প্রথম চালানও দেশে চলে এসেছে। এ ছাড়া কোভ্যাক্স থেকেও মডার্না ও ফাইজারের টিকা পেয়েছে দেশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘টিকার সংকট কাটতে শুরু করেছে। এখন টিকা নিবন্ধনের বয়সসীমা কমিয়ে শুরু হচ্ছে গণটিকাদান। উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান টিকা মজুদ করে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। বরং যেসব দেশে প্রয়োজন তাদের দিলে প্রাণহানি কমানো সম্ভব হবে।’