ডেস্ক নিউজ
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনা নির্ণায়ক কিট নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এর স্বপক্ষে গণস্বাস্থ্যের চিঠিতেই তাদেরকে শুরু থেকে সহযোগিতা করার প্রমাণ রয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।
এর আগে করোনাভাইরাসের কিট আবিষ্কার করার পর তা দিয়ে পরীক্ষা ও বাজারজাত করতে ঔষধ প্রশাসন সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
এ প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উনারা (গণস্বাস্থ্যের কর্মকর্তারা) বলছেন সহযোগিতা করছি না, উনাদের চিঠিতেই প্রমাণ আছে সহযোগিতা করছি। তাহলে উনারা কীভাবে বলতে পারেন আমরা সহযোগিতা করছি না। উনাদের আমরা যেটা বলছি, একটা উদ্ভাবন হয়েছে সেটা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নভাবে যেভাবে ভ্যালিডেটেড করতে হয় সেটি করতে হবে।’
গণস্বাস্থ্যের কিট নিয়ে তিনি বলেন, ‘উনারা বলছে, শতভাগ সফল। শতভাগ হোক, ৯০ ভাগ হোক, যতভাগই হোক- সেটি আমাদের ট্রায়াল করতে হবে। এটি ১০০ অথবা ২০০ মানুষের মধ্যে দেখতে হবে যে কতজন পজিটিভকে করলে পজেটিভ হয়, কতজন নেগেটিভকে করলে নেগেটিভই হয়। কোন দিনে পজিটিভ হয়, সেগুলোর একটা নির্ধারিত প্রটোকল ডেভেলপ করতে হবে। এই বিএমআরসি থেকে অ্যাপ্রুভ করতে হবে এবং আমাদের কমিটির মাধ্যমে সেটি অ্যাপ্রুভ করতে হবে। সেই প্রটোকলের মধ্যে উনারা পারফরমেন্স ট্রায়াল করে আমাদেরকে রিপোর্ট দেবে। পরে এটা আমরা ইভাল্যুয়েশন করে রিপোর্ট দেব। কিন্তু এটি মনে হচ্ছে লম্বা একটা পরিক্রমা, অনেক জায়গায় যাওয়া। সেটি কিন্তু না। আমরা অনলাইনেও এখন অনুমোদন দিচ্ছি।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উনি (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) অত্যন্ত বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, সম্মানের সঙ্গে বলছি, প্রথম ১৮ তারিখ উনারা কাঁচামাল আনার আনুমোদন চেয়েছিলেন। আমরা ১৯ তারিখে অনুমোদন দিয়েছি। তারপরও বিভিন্ন মিডিয়াতে উনি কিন্তু বলেছেন যে সাত দিন ধরে আমরা চাচ্ছি। সাত দিন আমাকে পিছিয়ে দিল-এটি সঠিক নয়। আমরা কিন্তু দুই তিনটা দৈনিকে প্রতিবাদ দিয়েছিলাম। আপনারা দেখেছেন। উনি যেটা বলছেন সেটা সঠিক নয়। উনারা ১৮ তারিখে বলেছিলেন, আমরা ১৯ তারিখে দিয়েছি। কীভাবে উনাদের সহযোগিতা করেছি সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট আমরা দিলাম।’
‘এরপরেও আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগতভাবেও উনি সংবাদমাধ্যমে, সংবাদ সম্মেলন করে, বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আমাদের ঔষধ প্রশাসন -তাদেরকে উনি হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন’ বলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই আমাদের দেশের এই মুহূর্তে প্রত্যেক মানুষের সহযোগিতা খুব দরকার। তাদেরও দরকার, গণস্বাস্থ্যের সহযোগিতা আমাদের দরকার। তাদের আমাদের সহযোগিতা দরকার। আমাদের গণমাধ্যম, দেশের মানুষ-সবাই মিলে, কিন্তু এই প্রবলেমগুলো সলভ করতে হবে। এইখানে যদি অযাচিতভাবে, অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে মানুষকে তথা প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালানো হয়, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক, এটি আমি প্রত্যাখ্যান করছি।’
‘আমি অনুরোধ করবো, এই ধরনের অপপ্রচার যেন না চালানো হয়। তিনি (ডা. জাফরুল্লাহ) একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, তার কাছ থেকে আমার বিজ্ঞানভিত্তিক এবং সৌজন্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কথাবার্তা আমরা আশা করব’ যোগ করেন মাহবুবুর রহমান।
কোন ধরনের কিট দিয়ে করোনার পরীক্ষা হচ্ছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘কিটের ব্যাপারে বলা হচ্ছে, টেস্ট, আইসোলেট এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং। কিন্তু কোন ধরনের টেস্টের কথা বলা হচ্ছে। টেস্ট বলা হচ্ছে আর্টিফিসিয়াল টেস্ট। সারা পৃথিবীব্যাপী আর্টিফিসিয়াল কিটের সংকট আছে। র্যাপিড টেস্ট কিটের সংকট নেই সারা পৃথিবীতে। হাজার হাজার কোম্পানি র্যাপিড টেস্ট কিট তৈরি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘১৮টা র্যাপিড টেস্ট কিটের আবেদন এখনো অধিদপ্তরে রয়েছে জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু ডব্লিউএইচও রিকমেন্ডেট করে না। এজন্য র্যাপিড টেস্ট কিট এখনো আমাদের দেশে চালু হয়নি। বরং আমাদের দেশে নির্ভরশীল যে টেস্ট কিট, সেটি হচ্ছে আর্টিফিসিয়াল মাধ্যম। আপনারা জানেন যে ২৫টি জায়গায় সেটি শুরু হয়েছে সারা দেশব্যাপী এবং ক্রমান্বয়ে এটা বাড়তে থাকবে।’
‘আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসছে, আমাদের গার্মেন্টস যারা তারা ৪টা আর্টিফিসিয়াল নিয়ে আসবেন। এভাবে আর্টিফিসিয়াল আমাদের প্রচলন হচ্ছে। যেটা কিনা স্পেসিফিক রিপোর্ট দেয়। এন্টিবডি টেস্ট কিন্তু সেটা দেয় না’ যোগ করেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।