ডেস্ক নিউজ
কুষ্টিয়া জেলায় পেঁয়াজ চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৯১০ হেক্টর জমি। সেখানে আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৪১৯ হেক্টর। কাকডাকা ভোর থেকে উঠে দিনব্যাপী পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তোলা, বাড়িতে নিয়ে এসে পরিস্কার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।
গত বছরের চেয়ে কম দামে পেঁয়াজের বীজ ক্রয়, চারার মূল্য কম, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা এবার ব্যাপকহারে পেঁয়াজ রোপন করছে বলে কৃষকেরা জানান। তবে চলতি মৌসুমে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, তেলের মূল্য বেশি হওয়ায় সেচের মূল্য বৃদ্ধি এবং পেঁয়াজের মাটি প্রস্তুতে খরচ বেশি হওয়ায় চাষিরা হতাশার মধ্যে আছে।
পেঁয়াজ চাষীরা জানান, যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে তাতে করে পেঁয়াজের মূল্য বাজারে কম হওয়ায় তারা লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বেশি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছে চাষিরা। তাই তাদের দাবি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করার। তা না হলে লোকসান আরো বেড়ে যাবে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় তাহেরপুরী, বারী পেঁয়াজ-১, কিংসুপার ও মেটাল এই চার জাতের পেঁয়াজ কৃষকেরা রোপন করছে। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৯১০ হেক্টর জমি, সেখানে অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৪১৯ হেক্টর জমি। এর মধ্যে পেঁয়াজ মুলকাটা ৩ হাজার ২৯৯ হেক্টর ও চারা রোপন পেঁয়াজ ৯ হাজার ১২০ হেক্টর। কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫৪০ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ৩ হাজার ২৭৭ হেক্টর, কুমারখালী উপজেলায় ৪ হাজার ২৫৫ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৩৭০ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় ২৩৫ হেক্টর ও দৌলতপুর উপজেলায় ২ হাজার ৭৪২ হেক্টর। তবে কৃষকরা জানায় কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যের চেয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকেরা পেঁয়াজ বেশি রোপন হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা দলবদ্ধভাবে শ্রমিক নিয়ে পেঁয়াজ তোলা কাজ করছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের বীজ গেল বছর খোলা ৬ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর তা কমে বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়।
পেঁয়াজের চারা গত বছর ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় কেজি বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি। বীজ, চারা, সার, পরিচর্যাসহ এবার বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষিদের খরচ হবে ২৮ থেকে ৩২ হাজার টাকা। এ বছর বিদেশি কিংসুপার জাতীয় চারা রোপণ করা হয়েছে। এতে বিঘায় ৪৫ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হবে। যার বাজার মূল্য হবে ৪০ থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া শহরতলী বাড়াদী গ্রামের চাষি নরেশর আলী জানান, ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে খরচের চেয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করে তেমন লাভ হচ্ছে না।
চাপড়া ইউনিয়নের চাষি মিজানুর বলেন, পেঁয়াজ চাষে খরচ কমেছে। এবার বিঘাপ্রতি খরচ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছিলাম। নিয়মিত পরিচর্যা করেছি। আশা করছি ফলন ভালো হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুষ্টিয়া জানায়, পেঁয়াজ চাষিদের অর্থকারী ফসলের মধ্যে অন্যতম। এ অঞ্চলের মাটি পেঁয়াজ চাষে উপযোগী। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে পরামর্শ দিয়ে আসছে।