ডেস্ক নিউজ
রাজধানীর কুড়িলে মাটি ভরাট করে মিলেনিয়াম হোল্ডিং লিমিটেড কোম্পানির ‘হিলটন ঢাকা’ নামে ফাইভ স্টার হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জলাধার ভরাট করে ফাইভ স্টার হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ দিয়েছেন। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আদালতের আদেশের বিষয়টি ঢাকা পোস্ট নিশ্চিত হয়েছে। স্থানীয় ৩ জন বাসিন্দার জনস্বার্থে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই আদেশ দিয়েছেন।
ওইদিন আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. নাসিম ইসলাম রাজু ও মো. নজরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুড়িল ফ্লাইওভার সংলগ্ন রেলওয়ের ১.৮৪ একর জমিতে মিলেনিয়াম হোল্ডিং লিমিটেড কোম্পানি যে ফাইভ স্টার হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সেটির ওপর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি রুল জারি করেছেন। এই জায়গা প্রকৃতপক্ষে জলাভূমি। সব ধরনের জরিপে এটা ডোবা বা জলাধার হিসেবে দেখানো হয়েছে। জলাধার আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলে উল্লেখ আছে। আদালত ওই জায়গায় মাটি ভরাটের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর কুড়িলে ‘জলাধার’ ভরাট করে একটি ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণ নিয়ে শুরু হয়েছে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা। রেল মন্ত্রণালয় জায়গাটি লিজ দেয় মিলেনিয়াম হোল্ডিং কোম্পানিকে। হোটেল কর্তৃপক্ষ সেখানে কাজ শুরু করেছে। টানানো হয়েছে বড় একটি বিলবোর্ড। চলছিল মাটি ভরাটের কাজ। জায়গাটি জলাধার উল্লেখ করে সেখানে হোটেল নির্মাণ থেকে বিরত থাকার দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদসহ মানববন্ধনও করেন তারা।
গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম জায়গাটি উদ্ধারে অভিযান চালান। তার দাবি, এটি একটি জলাধার যা নিকুঞ্জের মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করে আসছে। এখানে হোটেল হলে বর্ষার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকবে না। তাই নগরবাসীর স্বার্থে এখানে হোটেল করতে দেওয়া হবে না। রেলওয়ে এখানে হোটেল নির্মাণের অনুমতি দিয়ে ঠিক করেনি। তিনি চান এখানে খেলার মাঠ হবে, খোলামেলা থাকবে জায়গা। নগরবিদরাও বলছেন, জায়গাটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি খোলামেলা থাকাই উচিত। এখানে হোটেল করতে দেওয়া ঠিক হবে না। মিলেনিয়াম কোম্পানিকে অন্য কোথাও জায়গা দেওয়ার পরামর্শ তাদের। আর রেলওয়ে বলছে, সবকিছু যাচাই করে নিয়ম মেনেই ফাইভ স্টার হোটেল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় হোটেল হিলটন নামে একটি পাঁচ তারকা মানের হোটেল নির্মাণের জন্য মিলেনিয়াম হোল্ডিং লিমিটেড কোম্পানিকে ২০১৭ সালে কুড়িল এলাকায় ১ দশমিক ৮৪ একর জমি লিজ দেয় রেলওয়ে। এরপর দেওয়া হয় জমির লাইন্সেস। মিলেনিয়াম কোম্পানি তাদের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করে।
গত ২৭ জানুয়ারি হোটেল নির্মাণের জন্য বিলবোর্ড টানিয়ে গড়ে ওঠা স্থাপনা মেয়রের উপস্থিতিতে গুঁড়িয়ে দেন স্থানীয়রা। এ সময় হোটেল নির্মাণের বিরোধিতা করে মানববন্ধন করেন তারা। এ সময় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, কুড়িল বিশ্বরোডের পাশের এই জলাধার যুগ যুগ ধরে নিকুঞ্জের মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করে আসছে। এটি ভরাট হলে নিকুঞ্জসহ এয়ারপোর্ট রোডে বর্ষার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে নগরীর কোনো জলাধার ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। তিনি অভিযোগ করেন, জলাধারের জায়গা সরেজমিন পরিদর্শন না করেই রেলওয়ে বরাদ্দ দিয়েছে।