ডেস্ক নিউজ
পা দিয়ে লিখে টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পাওয়া তামান্না আক্তার নূরার যাবতীয় শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১২ মার্চ) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের মেডিকেল টিমের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনসহ চিকিৎসকরা তামান্নার দুই হাত এক্সরে, কার্ডিয়াক, হাতের মাসল ও পায়ের হিপ জয়েন্ট পরীক্ষা করেছেন।
শারীরিক পরীক্ষায় তামান্নার দুটি হাত সংযোজন করা সম্ভব বলে জানা গেছে। তবে পায়ের হিপ জয়েন্টে ত্রুটি থাকায় পা সংযোজন করা যাচ্ছে না। তারপরও চিকিৎসকরা তামান্নাকে হেঁটে চলায় সক্ষম করে তুলতে কোনোভাবে সহযোগিতা করা যায় কিনা সে ব্যাপারেও উন্নত চিকিৎসার কথা চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন তামান্নার বাবা রওশন আলী।
এদিকে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তামান্নার চিকিৎসা বোর্ডের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনসহ অন্যান্য চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে তামান্না ও তার বাবা-মা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, গত মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তামান্নাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে ভর্তি রেখে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চিকিৎসকেরা তার কৃত্রিম দুই হাত ও এক পা লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। এর প্রেক্ষিতে শনিবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা তামান্নার পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তামান্নার ডান পা ভালো থাকলেও বাম পায়ের হিপ জয়েন্টে ত্রুটি রয়েছে। তারপরও তামান্নার দুটো পা যদি লাগানো হয়, সেখানে তামান্নাকে দৃষ্টিনন্দন দেখাবে। কিন্তু সেই পা দিয়ে সে লেখালেখি করতে পারবে না। তাই চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তামান্নার পা লাগানো হবে না। তবে আশার কথা হলো তামান্নার হাতের মাসল ভালো থাকায় কৃত্রিম দুটি হাত সংযোজন করা হবে। ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক বোর্ড আমেরিকার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছে। ওখান থেকে তামান্নার দুটি কৃত্রিম হাত এনে সংযোজন করা হবে। সেই হাত দিয়ে তামান্না লিখতে না পারলেও তার অনেক কাজ সে নিজেই করতে পারবে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না আক্তার নূরা। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও।
বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ও সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে অডিও কলে ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা। একইসঙ্গে দুই বোন তামান্নার স্বপ্ন পূরণে যেকোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন।